Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sundarbans

বাঁধ ভেঙে বিপর্যস্ত বহু গ্রাম, ঘর হারানোর ভয়ে অনেকে

দু’দিন আগে পূর্ণিমার কোটালে বাসন্তী ব্লকের ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের গৌরদাস পাড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়।

বিপত্তি: মৌসুনি দ্বীপে ধস নেমেছে নদীবাঁধে। নিজস্ব চিত্র

বিপত্তি: মৌসুনি দ্বীপে ধস নেমেছে নদীবাঁধে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩৭
Share: Save:

লকডাউনের জেরে বন্ধ রোজগার। গত ক’দিন ধরে ভাতের জোগাড়ই তাই প্রধান চিন্তা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর। এর মধ্যে ফুঁসে ওঠা নদী ভয় দেখাচ্ছে মাথার উপরের ছাদটুকুও কেড়ে নেওয়ার। সম্প্রতি পূর্ণিমার কোটালে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে নদী। সুন্দরবনে নদী-লাগোয়া বহু গ্রামে বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে। সে সব আপাতত মেরামত হলেও জলের ধাক্কায় নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে বহু বাঁধ। যে কোনও মুহূর্তে তা ভেঙে জল ঢুকে ভেসে যেতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। খাবার জোগাড়ের পাশাপাশি ঘর বাঁচানোর চিন্তায় ঘুম উড়েছে সুন্দরবন লাগোয়া দুই জেলার মানুষের।

দু’দিন আগে পূর্ণিমার কোটালে বাসন্তী ব্লকের ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের গৌরদাস পাড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়। জলমগ্ন হয়ে পড়ে শতাধিক বাড়ি। ধান চাষ, আনাজের বাগান, পুকুরের মাছ সবই নষ্ট হয় তাতে। একই দিনে বাসন্তীর চুনাখালি পঞ্চায়েত লাগোয়া এলাকাতেও নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে গ্রামে। গোসাবা ব্লকের ছোটমোল্লাখালি, সাতজেলিয়া, কুমিরমারি, রাঙাবেলিয়া, পাখিরালয় এলাকাতেও নদীবাঁধে ফাটল ও ধস নামতে দেখা যায়। পাথরপ্রতিমা ব্লকের পূর্ণচন্দ্রপুর গ্রামের কাছে গোবদিয়া নদী বাঁধে ধস নেমে নোনা জল ঢুকেছে। ওই ব্লকের রামগঙ্গা পঞ্চায়েতের ভারাতলা গ্রামের কাছে বড়চূড়া নদীর বাঁধে ফাটল ধরেছে। সাগর, নামখানা এলাকায় নদীপথগুলি ছোট-বড় ধস নেমে প্লাবিত হয়েছে।

সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট এক পঞ্চায়েতের বাউনিয়া গ্রামে বেতনি নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। যদিও স্থানীয়দের তৎপরতায় এবং সেচ দফতরের সাহায্যে জল ঢোকা আটকানো যায়। এই ব্লকের হাটগাছি পঞ্চায়েতের কানমারি এবং ন্যাজাট দুই পঞ্চায়েতের ৪ নম্বর পাড়া ও বয়ারমারি এক পঞ্চায়েতের কয়েকটি জায়গায় নদী বাঁধের অবস্থা উদ্বেগজনক। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের মাধবকাটি সর্দারপাড়া ঘাটের কাছে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধের অবস্থাও খারাপ। প্রায় ৫০-৬০ ফুট নদীবাঁধ বসে গিয়েছে। বিশপুর পঞ্চায়েতের পূর্বপাড়ায় গৌড়েশ্বর নদীর বাঁধও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সন্দেশখালি ২ ব্লকের আতাপুরে তালতলা গোপালের ঘাটের আশপাশে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধের অবস্থাও উদ্বেগজনক। হাসনাবাদ ব্লকের বরুণহাটে বিএসএফ ক্যাম্পের কাছে ইছামতী নদী বাঁধ প্রায় ১০ মিটার বসে যায় পূর্ণিমার কোটালে। মিনাখাঁর নড়লি গ্রামে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নোনা জল ঢুকে পড়ে। মিনাখাঁর রামজয়ঘেরি এলাকাতে বাঁধ ভাঙলে গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে রাত জেগে বাঁশ, বস্তা দিয়ে সাময়িক ভাবে ভাঙন রোধ করে। স্থানীয়রা জানান, পূর্ণিমার কোটালে যেখানে যেখানে বাঁধ ভেঙেছে, সেচ দফতরের আধিকারিকেরা প্রায় প্রতিটি জায়গায় গিয়ে দ্রুত তা মেরামত করেছেন। গ্রামবাসীরাও হাত লাগিয়েছেন। তবুও চিন্তা কমছে না এলাকার মানুষের। কংক্রিটের বাঁধের পুরনো দাবি ফের উঠছে। গোসাবার রাঙাবেলিয়ার বাসিন্দা সুদীপ মণ্ডল বলেন, “বার বার বিদ্যাধরী নদীর বাঁধে ধস নামছে, ফাটল দেখা দিচ্ছে। সেচ দফতরের লোকজন কোনও রকমে মেরামতি করে ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার কিছু দিন বাদে সেই একই অবস্থা। কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ না হলে সমস্যা মিটবে না।’’

২০০৯ সালে আয়লায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই নদীবাঁধ মেরামতি ও কংক্রিটের বাঁধ তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ মঞ্জুর করে। এর মধ্যে রাজ্যে ক্ষমতা বদল হয়। প্রায় ১০০০ কোটি টাকা খরচ করে বেশ কিছু জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ হয়েছে সুন্দরবনে। কিন্তু বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁচা বাঁধ রয়ে গিয়েছে।

রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘এই সরকার ঠিক মতো নদীবাঁধের কাজ না করায় কেন্দ্রের টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। ফলে বাসন্তী, গোসাবা-সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার বহু জায়গাতেই এখনও নদীবাঁধের অবস্থা বেশ খারাপ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সুন্দরবনকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।’’ প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য বলছেন, ‘‘বাঁধগুলিতে নিয়মিত নজরদারি চলছে। ফাটল দেখা দিলে, ধস নামলে দ্রুত মেরামতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans River ERosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE