সকাল থেকেই গোটা ঠাকুরবাড়ির দখল চলে গিয়েছিল পুলিশের হাতে। এসপিজি-র অফিসারেরা কড়া নজর রাখছিলেন। সাধারণ মানুষকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছিল না। প্রশিক্ষিত কুকুর এনে দফায় দফায় তল্লাশি চলছিল।
দূরে তখন বিশাল ভিড়টা অপেক্ষা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এক ঝলক দেখার জন্য জন্য। সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে ঠাকুরবাড়ির আকাশে চক্কর কাটতে দেখা গেল পর পর তিনটি হেলিকপ্টার।
লোকজন ছুটতে শুরু করল ঠাকুরবাড়ির দিকে। রান্না-খাওয়া ফেলে বহু মহিলাও ছিলেন সেই ভিড়ে। ঠাকুরবাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া অ্যাসফল্টের রাস্তার পাশে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়েছিল। পাশেই মতুয়া মেলার বিশাল মাঠ। মুহূর্তের মধ্যে মাঠে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে গেল। হেলিপ্যাডের আশেপাশেও কাউকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু হেলিকপ্টার আকাশে দেখা যেতে অনেকে সেখানেও ছুট দিলেন।
ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১২টা ৮ মিনিট। হেলিপ্যাড থেকে বেরিয়ে মোদীর গাড়ির কনভয় ঢুকে পড়েছে ঠাকুরবাড়িতে। মানুষজন পড়িমড়ি করে ছুটলেন ব্যারিকেড পর্যন্ত। সকলের হাতে মোবাইল। ক্যামেরা অন করা সেখানে। পটাপট ছবি উঠছে।
প্রথম গাড়ি থেকে নেমে এলেন আগ্নেয়াস্ত্র হাতে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীরা। একটু পরেই গাড়ি থেকে নামলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীকে দেখামাত্র উপস্থিত জনতা ‘মোদী মোদী’ শব্দে চিৎকার জুড়ল। হঠাৎ শুরু হল হাততালি। অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আর এক দফা মোবাইলে ছবি তুলতে। পুলিশ কর্মীরা চেষ্টা করেও জনতাকে আর ব্যারিকেড থেকে দূরে পাঠাতে পারলেন না।
গাড়ি থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রী সোজা ঢুকে পড়লেন হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে। সেখানে প্রণাম সেরে মিনিট দু’য়েক পরে মন্দিরের ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। সকলের দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে প্রণাম করলেন। ‘মোদী মোদী’ রব উঠল ফের। মোদী হাত নাড়লেন। এরপরে ঢুকে পড়লেন পাশেই বড়মার ঘরে। মিনিট তিনেক সেখানে কাটিয়ে গাড়িতে উঠতে যাওয়ার আগে ফের জনতার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন। এরপরে গাড়ির কনভয় চলল মতুয়া ধর্মসভার মঞ্চের দিকে। মতুয়া মেলার মাঠে থাকা ভিড়টা সেখানে গিয়ে সুবিধা হবে না বুঝে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। কারণ, সকাল থেকেই মাঠ উপচে পড়ছিল ভিড়ে। সভায় বক্তৃতা শেষ করে ১২টা ৪৮ মিনিট নাগাদ প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরবাড়ির রাস্তা দিয়েই হেলিপ্যাডে দিকে রওনা দেন।
মছলন্দপুর থেকে মোদীর সভায় এসেছিলেন বিনোদ বারুই নামে এক বৃদ্ধ। বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে দেখতেই এসেছি। ওঁর কথা শুনেও খুব ভাল লাগল। টিভিতে অনেক দেখেছি। চোখের দেখা দেখতে পাব, ভাবিনি।’’
প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে উৎসাহিত বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বারাসত জেলা সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজকের সভা আমাদের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে মানুষের যে আবেগ-উৎসাহ দেখা গেল, তা অবশ্যই ভোটবাক্সে পড়বে।’’