প্রায় দশ কোটি জাল নোট উদ্ধারের তদন্তে নেমে পুলিশ বড়সড় আর্থিক প্রতারণা চক্রের হদিস পেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় সন্দেশখালির ধামাখালি ফেরিঘাটের উল্টো দিকে একটি হোটেল তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর জাল নোট উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছিল সিরাজউদ্দিন মোল্লা এবং দেবব্রত চক্রবর্তী নামে দুই দুষ্কৃতীকে। রবিবার রাতে বীরভূমের রামপুরহাট থানার তারাপীঠের একটি রিসর্ট থেকে তিস্তা সেন নামে এক মহিলাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বাড়ি রাজারহাটে। সোমবার বসিরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে দশ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানিয়েছে, তিন জনই একটি আর্থিক প্রতারণা চক্রে জড়িত, যে চক্র গোটা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। চক্রের পান্ডার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, চক্রটি রাজ্যের নানা প্রান্তের মানুষকে কম সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। ঋণের পরিমাণ কোনও কোনও সময় এক কোটি টাকাও হত! মূলত যাঁরা ধনী ব্যক্তি এবং যাঁদের ঋণের প্রয়োজন, তাঁদেরকেই ‘টার্গেট’ করা হত।
ঋণ দেওয়ার আগে বাক্সে (অ্যাটাচি) ভরে থরে থরে টাকার বান্ডিল নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে নিয়ে যেত প্রতারকেরা। সচরাচর একটি অ্যাটাচিতে ১০ লক্ষ টাকা রাখা থাকত। নোটের বান্ডিলে সামনে পিছু কিছু আসল টাকা থাকলেও ভিতরে ভরা থাকত জাল নোট! শুধু প্রসেসিং ফি-টুকু দিলেই এই টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হত। পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রসেসিং ফি নেওয়া হত ঋণের অঙ্কের দুই শতাংশ।
পুলিশ ইতিমধ্যেই এই চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা খোওয়ানো কিছু মানুষের সন্ধান পেয়েছে। অনেক প্রতারিত হওয়া মানুষ নিজেরাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, আসানসোলের এক বাসিন্দা এই চক্রের খপ্পরে পড়ে ২২ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। টিভিতে জাল টাকা উদ্ধারের খবর দেখে তিনি নিজেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
চক্রটি জাল নোট কী ভাবে সংগ্রহ করত? তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, কলকাতার নির্দিষ্ট একটি এলাকায় চক্রটির একটি নোট ছাপানোর জায়গা আছে। নিজেরাই আধুনিক প্রিন্টার, কালি, কাগজ-সহ নোট ছাপানোর উপকরণ কিনেছে। নিজেরাই নোট ছাপাত।
প্রায় দশ কোটি জাল টাকা নিয়ে তারা কেন সন্দেশখালিতে এসেছিল?
পুলিশের অনুমান, সন্দেশখালির মতো প্রত্যন্ত এলাকা বেছে নেওয়ার কারণ, ওই বিপুল জাল টাকা নিরাপদ জায়গায় রাখা। সন্দেশখালির হোটেল থেকে ধৃত দুই দুষ্কৃতীর কাজ ছিল, হোটেলে বসে টাকার বান্ডিল অ্যাটাচিতে ভরা। তারপরে তা বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। এর পিছনে আর কোনও কারণ আছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যে হোটেল থেকে জাল টাকা উদ্ধার হয়েছিল, সেটি তৃণমূলের ধৃত নেতা শেখ শাহজাহানের কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হোটেলটি কোনও দিনই শাহজাহানের ছিল না। অভিযোগ, শাহজাহান ওই হোটেল জোর করে দখল করেছিল। সন্দেশখালি কাণ্ডের সময়ে হোটেল মালিক সেটি ফিরে পান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)