Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি ধীরেন্দ্র
Murder

বিধান খুনে এ বার গ্রেফতার ভায়রা

বিধানের শ্যালিকার স্বামী, অর্থাৎ ভায়রা ধীরেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে ভাড়াটে খুনিদের কাজে লাগিয়ে বিধানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ধীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল।

ধীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল।

সীমান্ত মৈত্র  
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১ ০৭:৪৪
Share: Save:

বিধান খুনের পরেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন তার শ্যালিকা। ফোন বন্ধ ছিল শ্যালিকার স্বামীর। সে নতুন সিম নিয়েছিল খুনের ঘটনার পরে পরেই।

এই সব তথ্য ভাবাচ্ছিল পুলিশকে। অথচ, তার আগে খুনে জড়িত সন্দেহে বিধানের এক সময়ের ব্যবসায়িক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রসেনজিৎ মণ্ডল নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছিল বিধানের পরিবার। কিন্তু কিছুতেই দু’য়ে দু’য়ে চার করে উঠতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা।

শেষ পর্যন্ত তাঁদের দাবি, হিসেব মিলেছে। বিধানের শ্যালিকার স্বামী, অর্থাৎ ভায়রা ধীরেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে ভাড়াটে খুনিদের কাজে লাগিয়ে বিধানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বিধানের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠতা কখনওই মেনে নিতে পারেনি ধীরেন্দ্র। বহু দিন ধরেই রাগ পুষে রেখেছিল। এ বার ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে সুপারি কিলার ভাড়া করে খুনের ছক কষে সে-ই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২ লক্ষ টাকা খুনের পরে দেওয়া হয়েছিল দুষ্কৃতীদের। বাকি টাকা পরে দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। ধীরেন্দ্র জেরায় এ সব তথ্য স্বীকার করেছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের। ভাড়াটে খুনিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

এলাকায় ‘নিপাট ভালমানুষ’ হিসাবে পরিচিত পোলট্রি ব্যবসায়ী ধীরেন্দ্রর এই কাজে বিস্মিত এলাকার মানুষ। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘কোনও দিন কাউকে একটা চড়-থাপ্পর পর্যন্ত মারতে দেখিনি লোকটাকে। সে-ই কিনা লোক লাগিয়ে খুন করল!’’ তবে কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ধীরেন্দ্রর সংসারটা শেষ করে দিয়েছিল বিধানই। এই পরিণতি খুব অস্বাভাবিকও নয়।’’

গাইঘাটার কাহনকিয়া এলাকার বাসিন্দা বিধান সরকার খুন হয় বৃহস্পতিবার রাতে। মঙ্গলবার সকালে ধীরেন্দ্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে এ দিন বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসেনজিৎকে জেরা করে তদন্ত বিশেষ এগোতে পারেনি পুলিশ। নজর রাখা হচ্ছিল ধীরেন্দ্রর উপরে। পুলিশ তার পুরনো নম্বরের লোকেশন ও কললিস্ট খতিয়ে দেখে। তাতেই স্পষ্ট হয়, ধীরেন্দ্র খুনের ঘটনায় জড়িত।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিধানের শ্যালিকার সঙ্গে শশাডাঙার বাসিন্দা ধীরেন্দ্রর বিয়ে হয় সতেরো বছর আগে। অভিযোগ, বিয়ের দু’বছর পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয় বিধানকে নিয়ে। বিধানের সঙ্গে শ্যালিকার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাই নিয়ে পারিবারিক অশান্তি মেটাতে এলাকায় কয়েকবার সালিশি সভা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হলেই বিধান লোকজন দিয়ে ধীরেন্দ্রকে মারধর করত। হুমকি দিত। মাঝে মধ্যেই জামাইবাবুর কাছে চলে আসতেন শ্যালিকা।

নানা অসামাজিক কাজে এর আগে নাম জড়িয়েছে বিধানের। ২০১৬ সালে সে গ্রেফতার হয়। সে সময়ে তার শ্যালিকা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে পাঁচপোতা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। ধীরেন্দ্রর বাবা নাতির নামে কয়েক বিঘে জমি লিখে দিয়েছিলেন। অভিযোগ, জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে বিধান ওই জমি জোর করে বিক্রি করে তার বাড়ির কাছে শ্যালিকাকে বাড়ি করে দিয়েছিল। পুলিশকে ধীরেন্দ্র জানিয়েছে, বিধান তার স্ত্রীকে দিয়ে খোরপোষের মামলা করিয়েছিল। সেই টাকা দিতে হচ্ছিল ধীরেন্দ্রকে।

পুলিশকে ধীরেন্দ্র জানিয়েছে, ধীরেন্দ্র তার এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে দু’জন ভাড়াটে খুনির সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিন লক্ষ টাকায় রফা হয়।

এ বার তা হলে প্রসেনজিতের কী হবে?

পুলিশ জানিয়েছে, ধীরেন্দ্র-প্রসেনজিতকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে। প্রয়োজনে প্রসেনজিতকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE