Advertisement
E-Paper

বেআইনি ভাবে রক্ত বেচেই লালে লাল বনগাঁর উত্তমেরা

বেআইনি ভাবে রক্ত বিক্রির কারবারের হদিস পেল বনগাঁ থানার পুলিশ। চক্রের পান্ডা এবং এক মহিলা সহকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম উত্তম দাস ও অপর্ণা অধিকারী।

সীমান্ত মৈত্র 

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৪
 উত্তম দাস।

উত্তম দাস।

বেআইনি ভাবে রক্ত বিক্রির কারবারের হদিস পেল বনগাঁ থানার পুলিশ। চক্রের পান্ডা এবং এক মহিলা সহকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম উত্তম দাস ও অপর্ণা অধিকারী। বৃহস্পতিবার বনগাঁ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক উত্তমকে ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অপর্ণাকে পাঠানো হয়েছে জেল হেফাজতে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসছিল, রক্ত বিক্রির একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ এক মহিলা রক্তের কার্ড ও চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কে যান। নিজেকে রোগীর আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কথাবার্তা শুনে ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করায় মহিলা জানান, তাঁর নাম অপর্ণা। বাড়ি স্থানীয় ২ নম্বর রেলগেট এলাকায়। তিনি রোগীর কেউ হন না।

ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে মহিলাকে থানায় নিয়ে যায়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রক্ত বিক্রি চক্রের তথ্য মেলে। শক্তিগড় এলাকার বাসিন্দা উত্তমকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রোগীরা দু’ভাবে রক্ত পেয়ে থাকেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন আনলে ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বিনামূল্যে রক্ত মেলে।

নার্সিংহোমে ভর্তি কোনও রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে এক ইউনিট রক্ত ১০৫০ টাকায় পাওয়া যায়। পাশাপাশি রোগীর আত্মীয়েরা যদি রক্তের কার্ড সঙ্গে নিয়ে যান, তা হলে ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বিনামূল্যে রক্ত পাওয়া যায়।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উত্তম ও তার সঙ্গীরা বিভিন্ন এলাকায় যাঁরা রক্তদান শিবির করেন, তাঁদের কাছ থেকে কম টাকায় রক্তের কার্ড সংগ্রহ করত। কিছু নার্সিংহোমের সঙ্গে উত্তমের যোগসাজশ ছিল। নার্সিংহোমে ভর্তি কোনও রোগীর রক্ত লাগলে উত্তমের কাছে খবর পৌঁছে যেত। উত্তম রোগীর বাড়ির লোকজনকে প্রভাবিত করে, নিজের চক্রে কাজ করা মহিলাদের রোগীর আত্মীয় সাজিয়ে রক্তের কার্ড দিয়ে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে পাঠাত। বিনা খরচে রক্ত এনে রোগীর আত্মীয়দের কাছে চড়া দামে বিক্রি করা হত।

উত্তম অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে পুলিশের দাবি, এক ইউনিট রক্ত উত্তম দেড়-দু’হাজার টাকায় বিক্রি করত। বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ বলেন, ‘‘এই কাজে কোনও কোনও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের একাংশ এবং কোনও কোনও চিকিৎসকও জড়িত। সকলেই কমিশন পেত। চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

কে এই উত্তম? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ত্রিশের উত্তমের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে ওঠাবসা। এলাকার সকলেই ‘ব্লাড উত্তম’ নামে তাকে একডাকে চেনে। বাসিন্দারা জানালেন, বহু বছর ধরেই উত্তম রক্তের কারবার করে। কারও রক্তের প্রয়োজন হলে টাকার বিনিময়ে উত্তম রক্ত জোগাড় করে দেয়। বনগাঁ ছাড়াও বারাসত, বসিরহাট ও মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাডব্যাঙ্কে তার যোগাযোগ রয়েছে। মানিকতলায় একবার বেআইনি কাজ করতে গিয়ে ধরাও পড়েছিল।

Bangaon Blood Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy