পাকড়াও: পুলিশের উপরে চড়াও হওয়ায় গ্রেফতার করা হল এই দু’জনকে। —নিজস্ব চিত্র।
কিডনি পাচারকারী সন্দেহে এক যুবককে গাছে বেঁধে মারধর করা হল হিঙ্গলগঞ্জে। উদ্ধার করতে গেলে আক্রান্ত হয় পুলিশও। পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। গুজব রুখতে ইতিমধ্যে এলাকায় পোস্টার ছড়িয়ে প্রচারও শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে হিঙ্গলগঞ্জ থানার বাঁকড়ায় এক যুবককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রটে যায়, এলাকায় কাউকে একলা পেলে কিডনি কেটে নিয়ে যাচ্ছে কিছু লোক। ওই যুবক সেই চক্রেরই সদস্য।
মুখে মুখে খবর রটে যেতে দেরি হয়নি। দু’চার কথার পরেই যুবককে মারধর শুরু করে জনতা। গাছে বেঁধে রাখা হয় তাঁকে।
খবর পেয়ে পুলিশ আসে। যুবককে উদ্ধার করতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশকে। গ্রামের লোক পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুরও চলে। তবে শেষমেশ জখম অবস্থায় যুবককে উদ্ধার করে আনতে পেরেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, প্রহৃত যুবকের নাম আরিজুল গাজি ওরফে সইদুল। বাড়ি হাসনাবাদের রোজিপুর। হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়ার পশ্চিমপাড়ার এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। আরিজুলের এটি তৃতীয় বিয়ে। সাংসারিক বিবাদের জেরে বাপের বাড়ি চলে যান স্ত্রী। রাত ৮টা নাগাদ আরিজুলকে লাল কাপড়ে জড়ানো একটি ছুরি হাতে গ্রামের মধ্যে ঘুরতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দা সেরিনা খাতুন। তাঁর সন্দেহ হয়। চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তারপরেই শুরু হয় মার। পুলিশ জানিয়েছে, আরিজুলের কাছ থেকে একটি ছুরি মিলেছে। কেন তিনি ছুরি নিয়ে ঘুরছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
এ দিকে, পুলিশের উপরে আক্রমণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজীব গাজি এবং নজরুল মোল্লাকে। রাজীবের বাড়ি বাঁকড়ায়। নজরুলের বাড়ি ৪ নম্বর সান্ডেলেরবিলে।
বসিরহাটের এসডিপিও আশিস মৌর্য বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর কারণে মানুষ ভুল বুঝছেন। দোষীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য পোস্টারের মাধ্যমে প্রচার চলছে। কোনও রকম সন্দেহ হলে তা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, এই অনুরোধ জানানো হচ্ছে মানুষকে।’’
সোমবার বিকেলেও ন্যাজাট থানার পারসেমারি গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে এক ব্যক্তিকে খেজুর গাছের সঙ্গে বেঁধে গণপিটুনি দেয় জনতা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। ন্যাজাট থানার দুখিরামপুলের কাছে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে এক ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই এলাকার মানুষের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন পুলিশ কর্তারা। হিঙ্গলগঞ্জের আমডাঙা গ্রামে মাঝবয়সী এক ব্যক্তিকে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানাচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, গুজবের জেরে গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন, ভবভুরে প্রকৃতির কিছু মানুষ। হাসনাবাদ থানার ভান্ডারখালি চৌমাথার কাছে চায়ের দোকানে বসেছিলেন এক মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। তাঁর শরীরে কয়েকটি কাটা দাগ ছিল। জঙ্গি সন্দেহে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘সর্বস্তর থেকেই গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সকলকে বলা হচ্ছে। মানসিক ভারসাম্যহীন অথবা নিরপরাধ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা মর্মান্তিক। অবিলম্বে এ সব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’ জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা হাসনাবাদের বাসিন্দা ফিরোজ কামাল গাজি বলেন, ‘‘কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গুজব ছড়াচ্ছে।’’
হাড়োয়া থানার ওসি শিবশঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশের পক্ষে দোকান, ক্লাব, বাজারে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য প্রচার চলছে। গুজব ছড়াবেন না বলে পোস্টার মারা হচ্ছে। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে তাই মাইকে প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy