বেয়াক্কেলে: নারায়ণ বাছার।
মেদিনীপুরের নন্দকুমারের নারায়ণ বাছার ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ ছবিটি নির্ঘাৎ দেখেননি। নামও শোনেনি। কিন্তু দোল পূর্ণিমার মায়াবী চাঁদ আর চোলাইয়ের নেশা তাঁকে সেই পথেই নিয়ে গেল।
স্ত্রীকে দেখবেন বলে নেশার ঘোরে মাঝরাতে মালিকের ট্রলারের নোঙর খুলে একাই পাড়ি দিচ্ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের গেঁয়োখালির দিকে। তার জেরে শুক্রবার রাতে তুর্কি নাচন নাচতে হল পুলিশকে। রাতভর ৬টি থানার পুলিশ পাগলের মতো ‘জলদস্যু’ খুঁজে বেড়িয়েছে। ভোরবেলা জানা যায়, মেদিনীপুরের পথে ট্রলার চালিয়ে ঘোড়ামারা আর সাগর দ্বীপের কাছে লোহাচড়ার বালিতে আটকে গিয়েছিল ট্রলার। ভোরের কুয়াশা কাটলে পুলিশ উদ্ধার করে আনে নারায়ণকে। ‘‘জলদস্যু-টস্যু নয়, শুধু শুধু ছুটিয়ে মারল’’— বললেন এক পুলিশ কর্তা। বছর পঁয়ত্রিশের নারায়ণ কাকদ্বীপের চন্দন বেরার ‘বর্গভিমা ৩’ ট্রলারে কাজ করছেন বছর চারেক হল। তাঁর আচারণ-আচরণ অনেকের চোখেই সময় সময় স্বাভাবিক ঠেকে না। তা বলে দোলের রাতে এমন কাণ্ড কাণ্ড করে বসবেন, তা কেউ ভাবেনি।
চন্দনবাবু বলেন, ‘‘নারায়ণকে পাহারায় রাখা হয়েছিল। মাছ ধরার মরসুম শেষ হয়ে আসছে বলে ট্রলারে জিপিএস খুলে রাখা হয়েছিল। রাতে হঠাৎই কাকদ্বীপ বন্দর থেকে এক মৎস্যজীবী-সহ ট্রলার নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বলে খবর পাই। ’’
নারায়ণকে বেশ কিছুক্ষণ ফোনে না পেয়ে রটে যায়, তিনি জলদস্যুর কবলে পড়েছেন। শুরু হয় তল্লাশি। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, হারউড পয়েন্ট উপকূল থানা, ফ্রেজারগঞ্জ, এমনকী রায়দিঘি থানা থেকেও রাতেই মোহনায় চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ। সঙ্গে মৎস্যজীবীদের দু’টি নৌকো। ফ্রেজারগঞ্জ থেকে দু’টি স্পিড বোট নিয়ে বেরোন পুলিশকর্মীরা। অপারেশন চলে সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসুর নেতৃত্বে। রাত ১০ টা থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ চলে। ভোর বেলা পুলিশ দেখতে পায়, লোহা চড়ায় একা ট্রলার নিয়ে আটকে আছেন নারায়ণ। উদ্ধার করে তাঁকে হারউড পয়েন্ট উপকূল থানায় আনা হয়। পুলিশের কাছে নারায়ণ কবুল করেন, মদের নেশাটা বেশি ধরেছিল। মুড়িগঙ্গার ফুরফুরে হাওয়ায়, চাঁদের আলোয় স্ত্রীর কথা মনে পড়ে যায়। তখনই সে ঠিক করেন, ট্রলার নিয়ে তিন ঘণ্টার পথ পেরিয়ে গেঁয়োখালি যাবেন। সেখানে আছেন স্ত্রী।
মদের ঘোরে ট্রলার চালানোয় সেটি সামনের দিকে এগোনোর বদলে পিছন দিকে চলতে শুরু করে। নারায়ণের আর নিয়ন্ত্রণে ছিল না।
তথাগতবাবু বলেন, ‘‘ছেলেটা খুব ভুগিয়েছে। তবে নিরাপদে উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের তৎপরতারও পরীক্ষাও হল।’’ মালিকপক্ষ অভিযোগ না করায় নারায়ণকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy