Advertisement
E-Paper

আতঙ্ক থেকেই গেল বনগাঁয়

মঙ্গলবার পুরসভায় অনাস্থার উপরে ভোটাভুটি ঘিরে পুর এলাকায় কার্যত মাছি গলার উপায় রাখেনি পুলিশ। ভোর ৬টা থেকে পুরভবনের আশেপাশের ৫০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:৪২
তৎপর: স্টান গ্রেনেড ফাটিয়ে পরিস্থিতি সামালাচ্ছে পুলিশ। এই অস্ত্রে আলোর ঝলকানি ও শব্দ হলেও আঘাতের আশঙ্কা তেমন থাকে না। মঙ্গলবার বনগাঁয় ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

তৎপর: স্টান গ্রেনেড ফাটিয়ে পরিস্থিতি সামালাচ্ছে পুলিশ। এই অস্ত্রে আলোর ঝলকানি ও শব্দ হলেও আঘাতের আশঙ্কা তেমন থাকে না। মঙ্গলবার বনগাঁয় ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

এমন কড়া নিরাপত্তা শেষ কবে দেখেছেন, মনে করতে পারেন না বনগাঁর মানুষ।

মঙ্গলবার পুরসভায় অনাস্থার উপরে ভোটাভুটি ঘিরে পুর এলাকায় কার্যত মাছি গলার উপায় রাখেনি পুলিশ। ভোর ৬টা থেকে পুরভবনের আশেপাশের ৫০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কাঁদানে গ্যাসের সেল, জল কামান, স্টান গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের দেখে পথচলতি মানুষ থমকে দাঁড়িয়েছেন। এক বৃদ্ধ বলেই ফেললেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে।’’ সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়াও প্রায় ২০০ পুলিশ কর্মী এ দিন রাস্তায় দেখা গিয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত এবং বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএস আলি।

বনগাঁ শহরের প্রবীণ বাসিন্দা সত্তর বছরের বিনয় সিংহ। তিনি বনগাঁ চেম্বার অব কর্মাসের সম্পাদক। বললেন, ‘‘৭১ সালে যুদ্ধের সময়ে বনগাঁয় এক সঙ্গে অনেক সৈনিক দেখতাম। এ দিন এত পুলিশ দেখে সে দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।’’

বনগাঁ পুরসভায় সাম্প্রতিক ডামাডোলে শহরের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। বিনয় বলেন, ‘‘শুধু পুরসভার ডামডোল নয়, বনগাঁয় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে বাইরে থেকে ক্রেতারা শহরে আসছেন না। সকলেই মনে করছেন, শহরে যে কোনও সময় বড়সড় গোলমাল হতে পারে। আজও তো কার্যত বন‌্ধ পালন হল বনগাঁয়।’’

বেলা ১২টার পরে শহরের বহু দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিড় করেন। অনেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও চোখে পড়েছে।

বনগাঁ হাইস্কুলের দিকে ও বিচুলিহাটার দিকে শাসক দলের কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। পুরসভার একপাশে ছিলেন বিজেপি কর্মীরা। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য ন’জন কাউন্সিলর-সহ বেলা ২টো ১০ মিনিট নাগাদ পুরসভায় আসতেই কর্মীরা তাঁর নামে স্লোগান দিতে থাকেন। বিজেপির ১১ জন কাউন্সিলর পুরসভায় আসতেই পুলিশ হিমাদ্রি মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডলকে সভায় যেতে আটকে দেয়। সে সময়ে কাউন্সিলর সোমাঞ্জনা মুন্সি মুখোপাধ্যায়কে উত্তেজিত হয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘হাইকোর্ট ওই দুই কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ জোর করে তাঁদের আটকে দিয়েছে।’’

শঙ্কর আঢ্যরা নিজেদের জয়ী ঘোষণার পরে এলাকায় মিছিল করে তৃণমূল। এক সময়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বেধে যায় পুলিশের। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে গোলমাল থামাতে দু’দলের সঙ্গেই কথা বলতে দেখা গেল। এরই মাঝে বোমা পড়ে। বিশ্বজিতের অভিযোগ, তাঁকে লক্ষ্য করেই বোমা ছোড়া হয়েছিল।

বিকেলের পরে শহরের রাস্তায় তৃণমূল কর্মীদের সবুজ আবির মেখে আনন্দ করতে দেখা গিয়েছে। দিনের শেষে দু’পক্ষই অবশ্য দাবি করেছে, অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটিতে জয়ী হয়েছে তারাই।

এই পরিস্থিতি আরও বড়সড় গোলমালের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, মনে করছেন বনগাঁর বহু মানুষ। এক প্রবীণ নাগরিকের কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে হয় তো এ দিনই মুক্তি মিলবে। কিন্তু এখন যা অবস্থা, শহরটা তো বারুদের স্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে রইল। কখন যে কী হয়, কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না!’’

Bongaon বনগাঁ No Confidence Vote Bongaon Municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy