•ফেরা: বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি চলল দেবু। নিজস্ব চিত্র
পুলিশের উদ্যোগ, সঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ার ভূমিকা— সব মিলিয়ে অন্ধ বাবা ফিরে পেলেন ছেলেকে।
বুধবার রাত তখন প্রায় ১টা। বসিরহাটের দন্ডিরহাটে রাতপাহারায় বেরিয়েছিল পুলিশের গাড়ি। টাকি রাস্তার পাশে ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বছর সাতেকের এক বালককে। সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে আসে। পুলিশ অফিসার অনুপ ভট্টাচার্য কথা বলে বুঝতে পারেন, ছেলেটি পথ হারিয়েছে। তাকে নিয়ে আসা হয় বসিরহাট থানায়।
সেখানে ডিউটিতে ছিলেন তমাল সেনগুপ্ত। ছেলেটির সঙ্গে ভাব জমিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার বাড়ি বর্ধমানের মেমারিতে। বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল শনিবার। ছেলেটির ছবি হোয়াটস অ্যাপে তুলে মেমারি থানায় তাঁর এক বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেন তমালবাবু। শুরু হয় খোঁজ। সেই সূত্রেই নারায়ণ রায় ও তাঁর স্ত্রী সোমাদেবীর হদিস পায় পুলিশ। থানায় এসে সোমাদেবী হোয়াট অ্যাপের ছবি দেখে ছেলে দেবু রায়কে সনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কিন্তু বর্ধমান ছেড়ে ক্লাস প্রথম শ্রেণিতে পড়া ছেলেটা কী পৌঁছল বসিরহাটে?
সে জানিয়েছে, অন্ধ বাবা বাসে-ট্রেনে গান করে ভিক্ষা করেন। যা রোজগার হয়, তাতে একবেলাও ভাল করে খাওয়া জোটে না। তাই সে ঠিক করেছিল, দূরে কোথাও গিয়ে নিজে রোজগার করবে। এ ভাবেই এ দিক ও দিক ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছয় বসিরহাটে।
কিন্তু বাবা-মাকে ছেড়ে গেলে তাঁরা কষ্ট পাবেন না? ছেলেটি বলে, ‘‘যখন অনেক কাজ করে অনেক টাকা নিয়ে আসব, তখন ওঁরা খুশি হয়ে যেতেন। সেই মনে করেই বেরিয়ে পড়েছিলাম।’’
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে বৃহস্পতিবার দেবুকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। নারায়ণবাবুর কথায়, ‘‘ছেলেটাকে হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। কাজে বেরোতেই পারছিলাম না।’’
আর সোমাদেবীর কথায়, ‘‘গত শনিবার থেকে ছেলেটাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনে হয়েছিল, এত বড় দেশে হয় তো আর ওকে কখনও খুঁজেই পাব না।’’ পুলিশের ভূমিকার কথা বার বার বলে গেলেন দম্পতি। আর মায়ের আঁচলে মুখ ঢেকে দেবু বলে, ‘‘আর কখনও কোথাও চলে গিয়ে তোমাদের কাঁদাব না। দেখো, বড় হয়ে তোমাদের চোখের জল মুছিয়ে দেবো।’’
ছোট্ট ছেলেটার কথা শুনে পুলিশ কর্মীদেরও চোখ ভিজে আসার জোগাড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy