শোকার্ত: স্মৃতিই সম্বল বাসন্তীদেবীর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বছর তিনেক আগের দিনটার কথা মনে পড়লে আজও চোখে জল আসে গোবরডাঙার গৈপুরের বাসন্তী বসুর। বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও স্বামীকে অক্সিজেন দেওয়া যায়নি। মাত্র ষাট বছর বয়সেই মৃত্যু হয়েছিল বাসন্তীদেবীর স্বামী সনৎবাবুর।
শুধু সনৎবাবু নন, এ ভাবে চিকিৎসার অভাবে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। অতীতে গোবরডাঙা হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন, স্যালাইন— সব পরিষেবা মিলত। রোগী ভর্তির ব্যবস্থাও ছিল। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকতেন। এখন সে সব অতীত। মুখ্যমন্ত্রী যখন পুরপ্রধান সুভাষ দত্তের মুখের উপরে জানিয়ে দিলেন হাসপাতাল হবে না, তখন এলাকার মানুষ নিজেদের বেঁচে থাকা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, আর কত মৃত্যু দেখতে হবে?
বাসিন্দারা জানালেন, সন্ধ্যার পরে গোবরডাঙা শহরে কোনও চিকিৎসক পাওয়া যায় না। কিছু ঘটলে ১৪ কিলোমিটার দূরে গাড়ি ভাড়া করে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে হয়। যাওয়ার পথে অনেকের মৃত্যু হয়। প্রসবের ঘটনাও ঘটে। পৌর উন্নয়ন পরিষদের সম্পাদক অলোক রায়ের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বেহাল হাসপাতালের কারণে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর অনুরোধ, ‘‘এই মৃত্যু মিছিল বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন।’’
বাসন্তীদেবী জানান, সে দিন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল সনৎবাবুর। গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে যাওয়া হয়। সেখানে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। মেলেনি অক্সিজেন পরিষেবাও। কাছের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও চিকিৎসক মেলেনি। মারা যান সনৎবাবু। এর কিছু দিন আগেই বন্ধ হয়েছিল হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ পরিষেবা। বাসন্তীদেবীর কথায়, ‘‘ওই দিন হাসপাতাল থেকে যদি অক্সিজেন পরিষেবা পাওয়া যেত, তা হলে স্বামীর মৃত্যু হতো না।’’ আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, তিনি যেন হাসপাতালটি ঠিকমতো চালুর ব্যবস্থা করেন। আমার স্বামীর মতো আর কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় না মরেন।’’
২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার পাড়ার বাসিন্দা দিলীপ মজুমদার মারা গিয়েছেন। রাতে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে স্যালাইন, অক্সিজেন দেওয়া যায়নি। পরে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি মারা যান।
একই ভাবে মারা গিয়েছেন অসীম দাস, দেবকুমার সাধু। বরাত জোরে অনেকে ফিরেও এসেছেন। গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রবীর মজুমদারের কিছু দিন আগে রাতে সোডিয়াম-পটাসিয়াম নেমে গিয়েছিল। স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে তাঁকে স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। পর দিন কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘ওই রাতে যদি স্যালাইন দেওয়া না যেত, তা হলে বাঁচতাম না।’’ কিন্তু এই ব্যবস্থাটুকু যদি থাকত হাসপাতালে, আক্ষেপ সকলেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy