বাবার সঙ্গে রুমা। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।
স্বচ্ছল ঘরের ছেলেমেয়েদের দৌড় যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সামান্য পান বরজের দিনমজুর রামশ্বের খাঁড়ার মেয়ে রুমার দৌড় শুরু হয়েছে ঠিক সেখান থেকেই।
এ বছর মাধ্যমিকে বিষ্ণুপুর কেবি বিদ্যাভবনের ওই কৃতী ছাত্রী পুরো সাগর ব্লকের সমস্ত স্কুলকে টেক্কা দিয়ে প্রথম হয়েছে ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়ে। কিন্তু এ বার কী হবে, রুমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন মাঝপথে থমকে যাবে না তো? চিন্তায় গঙ্গাসাগরের একরত্তি মেয়েটা।
রুমা বলে, ‘‘স্বপ্ন তো অনেকেই দেখে। কিন্তু সংসারের এই পরিস্থিতিতে কত দূর যেতে পারব জানি না। তবে এখন ভাল করে উচ্চ মাধ্যমিকটাই দিতে চাই।’’ আত্মবিশ্বাসী হলেও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ভাবতেই হয় পরিবারটিকে।
রামেশ্বরবাবু দিনমজুরি ছাড়াও আর একটি বেসরকারি সংস্থায় ছোটখাট কাজ করেন। তাতেও সংসার চালানো দায়। রুমার দিদিকেও সুন্দরবন কলেজ থেকে অনার্স নিয়ে প়ড়িয়েছে কোনও রকমে। কিন্তু রুমার বেলায় কী ভাবে পড়ার খরচ জোগাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত। চিন্তিত বাবার কথায়, ‘‘খুব বেশি হলে ৭ হাজার টাকা আয় করি। মেয়েকে পড়াতে চাইছি, কিন্তু মনের জোর পাচ্ছি না। আমাদের মতো ঘরে এ রকম ভাল মেয়ে না জন্মালেই মনে হয় ভাল হতো!’’
তবে এত দিন স্কুলের সাহায্য পেয়ে এসেছে রুমা। প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু মাইতি, ইংরেজির অভিষেক মাইতিদের সাহায্যের হাত ওই ছাত্রীর মাথায় ছিল অনেক দিন ধরেই। স্কুলে পড়াশোনার খরচ মকুব করে দেওয়া বা বিনা পয়সায় কোচিং দেওয়ার কাজ করে গিয়েছেন তাঁরা।
অমলেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘ব্লকের মধ্যে প্রথম হয়েছে আমাদের ঘরের মেয়ে। ওর স্বপ্ন তো আমরা ভেঙে যেতে দিতে পারি না। সাহায্য করেছি। পারলে আরও করব।’’
পড়াশোনার সংস্কৃতি সাগর ব্লকে যথেষ্টই জোরদার। তাই এ রকম ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গেলে যে পরিমাণ খরচ প্রয়োজন, তার সবটা শেষমেশ জোগানো যাবে তো, প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে খাঁড়া পরিবারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy