Advertisement
০৮ মে ২০২৪
sandeshkhali

মাতৃযান নেই, হাসপাতালে আসতে ভরসা ইঞ্জিন ভ্যান

হাসপাতালে ভর্তি হলে  তাঁদের বাড়ি থেকে খাবার আনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ। হাসপাতাল থেকে রোগীদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা এখনও চালু হয়নি।

ভোগান্তি: কিছুদিন আগে ইঞ্জিন ভ্যানে করে হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে তুষখালি গ্রামের কাছে প্রসব হয়ে যায় এই মহিলার। — ফাইল চিত্র

ভোগান্তি: কিছুদিন আগে ইঞ্জিন ভ্যানে করে হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে তুষখালি গ্রামের কাছে প্রসব হয়ে যায় এই মহিলার। — ফাইল চিত্র

নবেন্দু ঘোষ
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৫
Share: Save:

প্রসবকেন্দ্র চালু হয়েছে, অথচ না আছে মাতৃযান। না আছে অ্যাম্বুল্যান্স। তাই ঝড়জলের রাত হোক, বা জানুয়ারির হাড়কাঁপানো ঠান্ডার রাত— প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা ইঞ্জিন ভ্যান। সেখানে ছাউনি না থাকলে বর্ষায় ভিজতে ভিজতেও হাসপাতালে পৌঁছন প্রসূতিরা। সেখান থেকে ‘রেফার’ করা হলেও ভরসা সেই ইঞ্জিন ভ্যানই।

এ দিকে, গ্রামের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে ইঞ্জিন ভ্যানে করে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে ঝাঁকুনিতে পথে প্রসব হয়ে যায়, এমন উদাহরণও বিরল নয়। গ্রামের মানুষের অভিযোগ, এর ফলে সদ্যোজাতের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

সন্দেশখালি ২ ব্লকের কোরাকাটি, দুর্গামণ্ডপ, মণিপুর— এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও প্রসবকেন্দ্র ছিল না। প্রসূতিদের নিয়ে ৩-৪টি নদী পেরিয়ে, একাধিক ইঞ্জিন ভ্যান পাল্টে খুলনা গ্রামীণ হাসপাতালে যেতে হত।

১৭ মে কোরাকাটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবকেন্দ্র চালু হয়েছে। এখানে নিকটবর্তী দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকের আমতলি, রাধানগর পঞ্চায়েত এলাকা থেকেও রোগীরা আসেন। এ ছাড়া, সন্দেশখালি ২ ব্লকের মণিপুর, কোরাকাটি, দুর্গামণ্ডপ পঞ্চায়েত এলাকার প্রসূতিরা আসেন। সব মিলিয়ে মাসে এই প্রসবকেন্দ্রে অন্তত ২০ জন প্রসূতি ভর্তি হন।

প্রায় সাত মাস হল প্রসবকেন্দ্র চালু হলেও মাতৃযান বা অ্যাম্বুল্যান্স নেই। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রসূতি মহিলাদের জন্য সরকারি মাতৃযান থাকার কথা ২৪ ঘণ্টা। বিনামূল্যে পরিষেবাও পাওয়ার কথা। প্রসূতিদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে ফোন করলেই গাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা মাতৃযান। অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হলেও মাতৃযান বিনামূল্যে পৌঁছে দেবে— নিয়ম এমনটাই।

কিন্তু এই সুবিধা পাচ্ছেন না গ্রামের প্রসূতিরা। হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁদের বাড়ি থেকে খাবার আনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ। হাসপাতাল থেকে রোগীদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা এখনও চালু হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুঁইজালি, কুমিরমারি, রাধানগর, এবং সন্দেশখালি ২ ব্লকের চুনাখালি, তুষখালি, গাববেড়িয়া, মণিপুরের মতো ১০-২০ কিলোমিটার দূর থেকে রোগীর জন্য দু’বেলা খাবার বয়ে আনতে খুবই সমস্যায় পড়ে পরিবারগুলি।

এ ছাড়া, এমন দূরত্ব ইঞ্জিন ভ্যানেই পেরোতে হয় প্রসূতিদের। কোরাকাটি পঞ্চায়েত এলাকার এক আশাকর্মী সবিতা সরকার জানান, ১৯ অক্টোবর এক প্রসূতিকে ইঞ্জিন ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তুষখালিতে ঝাঁকুনিতে ভ্যানেইপ্রসব হয়ে যায়। সবিতা বলেন, “দেড় মাস আগে এক প্রসূতিকে বেহাল রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে নিয়েযাওয়ায় ঝাঁকুনির জেরে মৃত বাচ্চা জন্মেছিল।”

সবিতা আরও বলেন, ‘‘শুধু প্রসূতিই নন, এলাকার যে কোনও রোগীকে দ্রুত ভাল ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স নেই। যে কোনও রোগীই বাড়ি থেকে হাসপাতালে যেতে সমস্যায় পড়েন।

আশাকর্মীরা অনে্কে জানালেন, রাতে হঠাৎ প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ইঞ্জিন ভ্যান পেতেও সমস্যা হয়। হাসপাতালে যেতে ভাড়া গুনতে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। কখনও বা তারও বেশি। শ্রীমতি মাহাতো নামে এক আশাকর্মীর কথায়, ‘‘রাত-বিরেতে প্রসূতিকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে ইঞ্জিন ভ্যান খুঁজতে গিয়েই অনেকটা সময় নষ্ট হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হয়।” কোরাকাটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক অভিষেক মণ্ডল বলেন, “মাতৃযান না থাকায় প্রসূতিদের হাসপাতালে আসতে বা হাসপাতাল থেকে রেফার করলে যাতায়াতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি উপরমহলে জানিয়েছি।”

বসিরহাট স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবিউল ইসলাম গায়েনের কথায়, ‘‘হাসপাতালে রান্নার ব্যবস্থা ও মাতৃযান যাতে দ্রুত চালু করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।” (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sandeshkhali Maternity Hospital Pregnant Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE