Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি ভাঙচুরে নিজে থেকে মামলা পুলিশের

বনগাঁর বাড়িতে ফিরলে তাঁকে যেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন চিত্রদীপ।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৮
Share: Save:

চাকরি গিয়েছে আগেই। এখনও নিজে ফিরতে পারেননি এলাকায়। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় বনগাঁ থানার পুলিশ নিজের থেকে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে জেনে কিছুটা স্বস্তিতে চিত্রদীপ সোম। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘তদন্তে সব রকম সহায়তা করব। আমি চাই, দোষীরা শাস্তি পাক।’’ বনগাঁর বাড়িতে ফিরলে তাঁকে যেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন চিত্রদীপ।

ফেসবুকে পুলওয়ামা কাণ্ডে তাঁর কিছু মন্তব্যের জেরে রবিবার দফায় দফায় হামলা চলে বিচলিহাটায় চিত্রদীপের শ্বশুরবাড়িতে। চাকরি সূত্রে সপ্তাহে পাঁচ দিন কলকাতায় থাকেন ওই শিক্ষক। শনি-রবিবার স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন বনগাঁর বাড়িতে।

রবিবার তিন দফায় লোকজন গিয়ে হুজ্জুত করে সেই বাড়িতে। প্রথমবার কিছু লোক গিয়ে চিত্রদীপকে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। সেই ছবি মোবাইলে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপরেই বাড়ি ছাড়েন চিত্রদীপরা। সন্ধের পরে একটি দল গিয়ে ভাঙচুর চালায় বাড়িতে। রাতের দিকে আরও একটি দল যায়।

পুলিশের প্রাথমিক ভূমিকা নিয়ে নিন্দায় সরব হয় নানা মহল। কেন হামলাকারীদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে প্রশ্ন ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

মঙ্গলবার নিজে থেকে মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। তাদের দাবি, ঘটনার দিন তিন বার চিত্রদীপের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল। সোমবার চিত্রদীপ দাবি করেছিলেন, ঘটনার কথা ইমেলে তিনি জানিয়েছিলেন বনগাঁ থানায়। এ দিন অবশ্য পুলিশের সাফাই, এ রকম কোনও ইমেল তারা পায়নি।

কিন্তু এখনও পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নিতে পেরেছে পুলিশ? সে দিন যারা চিত্রদীপের বাড়িতে চড়াও হয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করালো, বাড়িতে ভাঙচুর করল, তাদের কি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া গিয়েছে? পুলিশ কর্তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, তদন্ত চলছে।

হামলাকারীদের কি চিত্রদীপ চিনতেন?

তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভাঙচুরের সময়ে বাড়ি ছিলাম না। ফলে চেনার প্রশ্ন নেই। তবে জানতে পেরেছি, ওরা সকলে বিজেপি সমর্থক। কারা ভাঙচুর করেছে, তা পুলিশ এলাকায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই জানতে পারবে।’’ কিন্তু যারা তাঁকে হাতজোড় করে, মাটি ছুঁয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করালো, তাঁদেরও কি চেনেন না চিত্রদীপ? তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওদের চিনি না। এলাকার কেউ নয় বলেই মনে হয়। তবে পরে শুনেছি, পাড়ার কেউ কেউ ওদের চেনেন।’’

চিত্রদীপের মন্তব্য শুনে বিজেপির বারাসত জেলা সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি তো দেখছি মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় কথা বলছেন। আসলে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসে দেশবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করেছেন।’’ চিত্রদীপের অবশ্য দাবি, দেশবিরোধী কাজ তিনি করেননি। কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত জওয়ানদের শহিদ বলা উচিত কিনা, এ নিয়ে নিজের তথ্যভিত্তিক মন্তব্য লিখেছিলেন মাত্র। ক্ষমা চাওয়ানোর ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, এক ব্যক্তি উত্তেজিত যুবকদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। তাঁর নাম মঙ্গলময় নাগ। চিত্রদীপ তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। বললেন, ‘‘ওই ব্যক্তির না থাকলে হয় তো শারীরিক ভাবেও নিগৃহীত হতে হত।’’ মঙ্গলময় এ দিন বলেন, ‘‘জওয়ানদের নিয়ে ওই শিক্ষকের মন্তব্য সমর্থন করি না। তবে ঘটনার সময়ে পাড়ার জামাই চিত্রদীপ আমাকে ডেকেছিলেন বলে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কেউ গোলমাল করেনি। পরে কারা ভাঙচুর করেছে, জানি না।’’

বাজার এলাকার পাশেই বাড়িটি। সেখানে এত কাণ্ড হয়ে গেল, অথচ, কেউ হামলাকারীদের চেনে না, তা হয় কী করে? স্থানীয় কয়েক জনের দাবি, রবিবার হওয়ায় দোকানপাট বেশিরভাগই বন্ধ ছিল। রাস্তায় লোকজন ছিল কম। তবে কেউ কেউ জানাচ্ছেন, যারা চড়াও হয়েছিল, সকলেরই বয়স কম। কেউ সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। এমনই এক যুবককে খুঁজে পাওয়া গেল। নাম প্রকাশ করা যাবে না, ছবি তোলা যাবে না— এই শর্তে কথা বলতে রাজি হলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যুক্তি-তর্ক জানি না। নিহত জওয়ানেরা তো আর বাড়ির কাজ করতে সীমান্তে যাননি। দেশরক্ষার কাজে গিয়ে মারা গিয়েছেন। ওঁরা অবশ্যই শহিদ। ওই শিক্ষক তাঁদের অপমান করেছেন। আমরা শুধু ক্ষমা চাইতে বলেছিলাম। মারধর করা বা চাপ দেওয়া হয়নি।’’ ভাঙচুর চালাল কারা, তা তিনি জানেন না বলেই দাবি করেছেন ওই যুবক। প্রশ্ন হল, ওই যুবক বা তাঁদের মতো বাকিদের মতামতের উল্টো কথা বললেই কি তবে ক্ষমা চাইতে হবে? নিরুত্তর বছর কুড়ির তরুণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE