টাকা ফেললেই মিলছে ‘বাবা-মা’।
এত দিন জাল ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, স্কুল শংসাপত্র, বয়সের শংসাপত্র— এমন নানা ধরনের নথি জাল করার চক্রের হদিশ মিলেছে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী নানা এলাকায়। সে সব তৈরি করতে গেলে কোনও নথিপত্র ছাড়াই বন্দোবস্ত ছিল জালিয়াতদের হাতে। অন্যের ভোটার কার্ডের ছবি বদলে ফেলা হত। পাসপোর্টের নথিও নানা উপায়ে বদলে ফেলা হত। এমন নানা ফন্দি-ফিকিরের কথা এর আগে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
কিন্তু ইদানীং জাল পরিচয়পত্রের বদলে আসল ভোটার কার্ড, আধার কার্ডই তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সে সব তৈরি করতে গেলে যে সব নথিপত্র দরকার, সে সবে জালিয়াতি চলছে। বাংলাদেশিরা এ দেশে এসে টাকার বিনিময়ে অভিভাবক জোগাড় করছে। তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার যোগ দেখিয়ে এ দেশের বসবাসকারী সেই ‘বাবা-মা’দের আসল কাগজপত্র দেখিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর ‘আসল’ ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট।
সম্প্রতি অনেক বাংলাদেশিকে গ্রেফতারের পরে এই তথ্য সামনে আসছে। গত তিন মাসে বসিরহাট, বাদুড়িয়া, স্বরূপনগরে এ রকম বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দিন কয়েক আগে ভুয়ো নথি দেখিয়ে পাসপোর্ট করাতে এসে বসিরহাটে ধরা পড়ে আবদুল্লা গাজি। সাতক্ষিরার কাশীমারি গ্রামের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি বসিরহাটের সোলাদানার এক বাসিন্দাকে বাবা সাজিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
এই সব কাজে সাহায্য করছে এ দেশের কিছু দালাল, এমনটাই জানতে পারছে পুলিশ। তারা হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে নতুন জালিয়াতির রাস্তা খুঁজে পেয়েছে। একে তো চোরাপথে বাংলাদেশিদের এ দেশে ঢোকানো, আশ্রয় জোগাড় করে দেওয়ার মতো কাজে হাজার হাজার টাকা কামায় এরা। তার উপরে এখন নকল বাবা-মা ধরে দিয়েও দেদার টাকা রোজগার করছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। যাদের বাবা-মা সাজানো হচ্ছে, তাদের হাতেও কিছু টাকা গুঁজে দেওয়া হচ্ছে। এমন কয়েক জোড়া বাবা-মা-ও এর আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে, দালালেরা সব সময়েই ভরসা দিত, কোনও চিন্তা নেই। সরকারি দফতরেও তাদের লোক ‘ফিট’ করা আছে। সব সামলে নেওয়া হবে। তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে এ দিকটাও।
ইতিমধ্যে পুলিশ জানতে পেরেছে, এ দেশের পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য কাউকে মা-বাবা বানানো হচ্ছে। কাউকে চাচা-চাচি। এমনকী, গ্রামের মেয়েদের বিয়ে করেও পরিচয়পত্র জোগাড় করেছে কেউ কেউ।
বিশেষত বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে এর আগে বড়সড় জঙ্গি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। কন্দহর বিমান ছিনতাই কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত বেলাল ধরা পড়েছিল এই সীমান্ত এলাকায়। এ ছাড়াও নানা সময়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে, এমন তথ্য আছে গোয়েন্দাদের হাতে। বাবা-মা সাজিয়ে এ দেশের আসল পরিচয়পত্র বের করে নিতে পারলে সহজেই দেশের যে কোনও প্রান্তে যাওয়া যাবে। ফলে এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক বলে মনে করছেন তাঁরা। যে সব দালালরা এই কাজে অনুপ্রবেশকারীদের সাহায্য করছে, তাদের দ্রুত শনাক্ত করা জরুরি বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy