চিন্তিত: উনুনেই ভরসা করতে হচ্ছে ওঁদের। ছবি: সামসুল হুদা।
চপ ভাজেন কেউ। কারও চায়ের ছোট্ট দোকান বাজারের এক কোণে। গ্যাসের বেড়ে চলা দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে আর পেরে উঠছেন না এই ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়িয়ে কত আর সামাল দেবেন! তাতেও তো ক্রেতা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। সব মিলিয়ে নাজেহাল জেলায় জেলায় অনেকেই। পরিস্থিতির খোঁজ নিল আনন্দবাজার
গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া। মাস কয়েক আগেও সিলিন্ডার প্রতি প্রায় ৬৫০ টাকায় মিলত রান্নার গ্যাস। এখন সেই দামই ৯০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভর্তুকির পরিমাণও কমে গিয়েছে অনেকটা। এতে সমস্যায় পড়েছেন মানুষ। দুই জেলার বহু পরিবারই গ্যাস ছেড়ে কাঠের উনুনে ফিরে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনায় পাওয়া গ্যাস নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। দাম বেড়েছে ব্যবসায়িক গ্যাস সিলিন্ডারেরও। গত বছর সেপ্টেম্বরে ব্যবসায়িক গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল প্রায় ১১৯৬ টাকা। তার এখন দাম হয়েছে ১৭৭০ টাকা!
জেলা জুড়ে বেশিরভাগ ছোটখাট চা, চপ, তেলেভাজার দোকানে রান্নার গ্যাসই ব্যবহার হয় বলে জানা গেল। কিন্তু দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন এই সব ছোট ব্যবসায়ী। অনেকেরই আয় কমেছে। খরচ সামলাতে না পেরে গ্যাস ছেড়ে কাঠের উনুনে রান্না করছেন অনেকে। করোনা ও লকডাউনের ফলে এমনিতেই বেশিরভাগ ব্যবসার হাল খারাপ। তার উপরে গ্যাসের দাম বাড়ায় ছোট ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগেরই অবস্থা সঙ্কটজনক। অনেকের আশঙ্কা, এ ভাবে চললে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সুবিধাজনক অবস্থায় নেই সেই সব ছোট ব্যবসায়ী, যাঁরা ব্যবসায়িক গ্যাস ব্যবহার করেন। হাসনাবাদ থানার বায়লানি বাজারে ছোট রেস্তরাঁ চালান সোমনাথ ঘোষ। তিনি জানান, লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল দোকান। সরকারি অনুমতি মিলতে ফের খোলা হয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সে সময়ে খাবারের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। তাতে সামান্য সুরাহা হয়। কিন্তু সম্প্রতি গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফের সমস্যা বেড়েছে। সোমনাথ বলেন, “গ্যাসের দাম বাড়ায় লাভ অনেক কমেছে। কিন্তু খাবারের দাম আর বাড়ালে চাহিদা কমে যাবে। মানুষের আয় তো বাড়ছে না।”
বনগাঁর মতিগঞ্জের মিষ্টি ব্যবসায়ী অসীম মোদক জানান, গ্যাসের দাম বাড়ায় বাধ্য হয়েছেন মিষ্টির দাম বাড়াতে। এক কেজি সন্দেশে প্রায় ২৫ টাকা দাম বাড়াতে হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “দাম বাড়ায় ক্রেতার সংখ্যা কমে গিয়েছে। আয়ও কমে গিয়েছে।” গাইঘাটার মণ্ডলপাড়া এলাকায় যশোর রোডের পাশে চায়ের দোকান তন্ময় বালার। গ্যাসেই চা করেন। তন্ময় জানান, চা করতে সপ্তাহে একটি করে সিলিন্ডার লাগে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে খরচ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “গ্যাসের দাম বাড়লেও চায়ের দাম বাড়াতে পারিনি। দাম বাড়ালে ক্রেতা কমে যাবে। ফলে আয় কমেছে অনেকটাই। প্রতি মাসে ১২০০ টাকা কম আয় হচ্ছে।”
ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারের হোটেল মালিক লুৎফর মোল্লা জানান, আগে গ্যাসেই রান্নাবান্না হত। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ায় কাঠের উনুনে রান্না শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, “এমনিতেই সরকারি বিধি-নিষেধের ফলে অনেকদিন হোটেল বন্ধ ছিল। করোনার জন্য ব্যবসায় মন্দাও যাচ্ছে। হোটেলের কর্মীদের বেতন দিতে গিয়েই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এত টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কিনে গ্যাসে রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে উনুনে রান্না করতে হচ্ছে।” বাসন্তীর চপ ব্যবসায়ী সুদর্শন মাইতি বলেন, “যে ভাবে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে, তাতে গ্যাস ছেড়ে ফের কাঠ-কয়লায় ফিরে এসেছি। এ ছাড়া কোনও উপায় নেই।”
ভাঙড়ের এক গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর জিয়াউর রহমানের কথায়, “বাড়িতে ব্যবহারের সিলিন্ডারের দাম এখন ৯১১ টাকা। ভর্তুকি মাত্র ২৩ টাকা। ব্যবসায়িক গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১৭৭০ টাকা। হঠাৎ করে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ সিলিন্ডার নিতে চাইছেন না। তার উপরে নতুন গ্যাসের সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy