Advertisement
E-Paper

বাসের ‘টক্করে’ মেয়ের সামনে মৃত্যু মায়ের

যদিও পুলিশ গতির রেষারেষির কথা স্বীকার করছে না। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রেষারেষির জেরেই প্রাণ হারিয়েছেন নিতুদেবী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০০:৩২
মৃতা নিতু গুপ্ত এবং মেয়ে দীক্ষা গুপ্ত (পাশে)।

মৃতা নিতু গুপ্ত এবং মেয়ে দীক্ষা গুপ্ত (পাশে)।

চোখ বন্ধ করলে বারবার একই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছে ছোট্ট দীক্ষার। একটা হাত তাকে ঠেলে দিচ্ছে। কিছু বোঝার আগেই সে ঢুকে যায় বাসের নীচে। পলকের মধ্যে বাসের চাকা তার ডান হাত ঘষে পার হয়ে যায়। যে হাত বাসের ভিতরে ঠেলে তার জীবন বাঁচিয়ে দিল, সেই হাতটা আঁকড়েই সে চলতে শিখেছে। চোখ খুলে দীক্ষা দেখে, কয়েক হাত দূরে পড়ে সেই মায়ের নিথর দেহ। মঙ্গলবার সকালে ব্যারাকপুর চিড়িয়ামোড়ের এই দুর্ঘটনায় বলি হলেন নিতু গুপ্ত (৩৬)। চোখের সামনে মা-কে হারিয়ে হতবাক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দীক্ষা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দু’টি বাসের মধ্যে রেষারেষির জেরেই এই অঘটন।

যদিও পুলিশ গতির রেষারেষির কথা স্বীকার করছে না। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রেষারেষির জেরেই প্রাণ হারিয়েছেন নিতুদেবী। দুর্ঘটনার পরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে শান্তিবাজারের গুপ্ত পরিবার। ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি স্কুলের ছাত্রী দীক্ষাকে রোজ সকালে নিতুদেবীই স্কুলে পৌঁছে দিতেন। চিড়িয়ামোড়ের কাছেই তাঁদের বাড়ি। এ দিনও সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোন তাঁরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ ছিল বলে তাঁরা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, তখন ৮১ নম্বর রুটের দু’টি বাসের মধ্যে গতির রেষারেষি চলছিল। সিগন্যালে লাল আলো জ্বলে ওঠায় থেমে যায় সামনের বাস। সেই সুযোগে পিছনের বাসটি সামনের বাসকে টপকে সিগন্যাল ভেঙে ব্যারাকপুর স্টেশনের রাস্তা ধরে। এ দিকে, পারাপারের সঙ্কেত পেয়ে দীক্ষাকে নিয়ে রাস্তায় নামেন নিতুদেবী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সেই সময়ে নিয়ম ভেঙে আসা ৮১ নম্বর বাসের সামনে পড়ে যান তাঁরা। বাসের ধাক্কায় দু’জনেই রাস্তায় পড়ে যান। পিছনের চাকা তাঁদের পিষে দেবে আন্দাজ করে এক হাত দিয়ে দীক্ষাকে বাসের নীচে ঠেলে দেন নিতুদেবী।

আশপাশের লোকের চিৎকার শুনে বাসের চালক বুঝতে পারেন কিছু একটা ঘটে গিয়েছে। সজোরে ব্রেক কষেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাসের পিছনের চাকা নিতুদেবীর ঊরু এবং কোমরের উপরে উঠে যায়। বাস থামিয়ে পাশের গলি দিয়ে চম্পট দেন চালক। কন্ডাক্টরও পালান।

অচেতন নিতুদেবীকে সঙ্গে সঙ্গেই বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ গিয়ে বাসটিকে বাজেয়াপ্ত করে থানায় নিয়ে যায়। রাত পর্যন্ত বাসচালকের খোঁজ মেলেনি। ঘটনার কথা জানার পর থেকে নিতুদেবীর স্বামী প্রমোদ গুপ্ত শয্যাশায়ী। বিছানায় শুয়ে মাঝেমধ্যেই ফুঁপিয়ে উঠছে ছোট্ট দীক্ষা। ঘুমোতে বললে চোখ বন্ধ করেই শিউরে উঠে বসে পড়ছে সে। অবশেষে চিকিৎসকেরা তাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ান।

পুলিশ অবশ্য বাসের রেষারেষির কথা মানতে চায়নি। তাদের যুক্তি অনতিদূরের বাস টার্মিনাস থেকে এত কম সময়ের ব্যবধানে একই রুটের দু’টি বাস আসতে পারে না। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টার্মিনাস থেকে আগে ছেড়ে এলেও বাসগুলি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। পরের বাস এলেই শুরু হয়ে যায় রেষারেষি।

Reckless bus Death Barrackpore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy