Advertisement
E-Paper

প্রকল্পের কাজ থমকে, জল পেতে হয়রান মানুষ

বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে থাকলেও, জলজীবন প্রকল্পের টাকা পেয়ে গিয়েছে রাজ্য। কিন্তু তারপরেও কি গ্রামে গ্রামে জল সরবরাহের কাজে গতি এসেছে? পঞ্চায়েত ভোটের আগে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ ০৯:২০
কল বসানো হলেও মেলে না জল। বারাসতের নীলগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

কল বসানো হলেও মেলে না জল। বারাসতের নীলগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP

রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তরফে দু’টি প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি পাইপলাইনে জল পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিছুটা কাজ হয়ে দু’টি প্রকল্পই থমকে গিয়েছে টেন্ডার নিয়ে জটিলতায়। এই পরিস্থিতিতে জলকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বারাসত ১ ব্লকের বহু বাসিন্দা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সদর শহর বারাসত সংলগ্ন বারাসত ১ ব্লকে ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন প্রকল্পে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে বলা হয়েছিল, ব্লকের প্রতিটি বাড়িতে পাইপ লাইনে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রথম দিকে কিছুটা কাজ হয়ে তা থমকে যায়। ২০২১ সালে রাজ্য সরকারের তরফে জলস্বপ্ন প্রকল্প শুরু হয়। গঙ্গার জল পরিস্রুত করে পাইপলাইনে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়। কাজ বন্ধ রয়েছে সেটিরও। যদিও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, গ্রামীণ এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ চলছে। চলতি বছরেই কাজ সম্পূর্ণ হবে।

প্রশাসনের দাবি, জল জীবন প্রকল্পে ১৮ শতাংশ বাড়িতে পাইপ লাইনের জল পৌঁছেছে। যদিও সেই জল পানের যোগ্য নয় বলে অভিযোগ বেশিরভাগ মানুষের। আবার বেশ কিছু এলাকায় পাইপ লাইনের সংযোগ পৌঁছলেও জল আসেনি। দত্তপুকুর থানার বড় এলাকার বেশিরভাগ বাড়িতে পাইপ লাইনের জল পৌঁছয়নি। এ দিকে, এলাকায় পুকুরের সংখ্যা কমেছে। কিছু পুকুরে আবর্জনা ফেলায় সেই জল ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দত্তপুকুর ২পঞ্চায়েতে অনেক জায়গায় বড় অঞ্চল জুড়ে ভরসা একটি মাত্র গভীর নলকূপ। আশপাশের বাসিন্দাদের জল টেনে নিয়ে যেতে হয়। জলেরজন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।

এই ব্লকের মধ্যে আছে বারাসত পুরসভাও। এখানে সব বাড়িতেই জল পৌঁছে গিয়েছে। তবে পেটের অসুখের ভয়ে সেই জল পান করেন না বলে জানালেন অনেকেই। গোটা ব্লক জুড়েই বিকল্প পন্থায় জল জোগাড় করছেন মানুষ। অনেকে বাড়িতে মাটি থেকে জল তোলার পাম্প বসিয়েছেন‌। কেউ কেউ জল শোধনের মেশিন বসিয়েছেন। ব্লকের বড় অংশের মানুষ জল কিনে খান। বাজার চলতি বেশ কিছু জল বিক্রি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বারাসত শহর-সহ ব্লকের গ্রামীণ এলাকায় বছরে প্রায় ১ কোটি টাকার জল বিক্রি হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দিদির দূত কর্মসূচিতে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার গিয়েছিলেন দত্তপুকুর ও কদম্বগাছি এলাকায়। এলাকার বাসিন্দারা তাঁর কাছে জলের দাবি জানান। তিনি আশ্বাস দেন, সাংসদ তহবিলের টাকায় এলাকায় পানীয় জলের কল বসানো হবে। যদিও সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি। দত্তপুকুরের বাসিন্দা নীলিমা বিশ্বাস বলেন, ‘‘দূর থেকে জল টেনে আনতে হয়। গরমে সমস্যা বাড়ে। কবে বাড়িতে জল পৌঁছবে জানি না।’’ নীলগঞ্জের বাসিন্দা রবিন সাহা বলেন, ‘‘এলাকায় অনেকের বাড়িতে পাইপ লাইনের জল পৌঁছেছে। কিন্তু ওই জল খাওয়া যায় না। পেটের সমস্যা হয়। প্রায় সকলেই জল কিনে খান। কেউ কেউ বাড়িতে জল শোধনের মেশিন বসিয়েছেন। মোট কথা, জল পেতে হলে টাকা খরচ করা ছাড়া উপায় নেই।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতিবারই ব্লকের কোথাও না কোথাও জলবাহিত পেটের অসুখের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বারাসতের চিকিৎসক সায়ন্তিকা সরকার বলেন, ‘‘রোগীদের পাইপ লাইনের জল খেতে বারণ করি। বহু বার দেখেছি, জল থেকে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হচ্ছেন। পাইপলাইনের জল নিয়মিত পরীক্ষা হয় কি না জানা নেই। তাই কেনা বা মেশিনে শোধন করা জল পান করতে বলি সকলকে।’’

এ নিয়ে বারাসত ১ বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, ‘‘টেন্ডারের জটিলতায় আটকে আছে কাজ। আশা করছি, ২০২৪ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’’ জল থেকে অসুখের বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পাইপ লাইনের জল পানের যোগ্য নয়, এমন অভিযোগ কেউ করেননি।’’

Water crisis Barasat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy