Advertisement
১১ মে ২০২৪
বিশ্ব জলদিবসেও বহু এলাকায় জলের জন্য হাহাকার মিটল কই
Drinking water

Drinking water: ১২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বাড়ির জল আনে ইয়াকুব

দূর থেকে গিয়ে জল আনতেও পারেন না। আবার জল কিনে খাওয়ারও সামর্থ্য হয় তো নেই। তাঁরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় টিউবওয়েলের অস্বাস্থ্যকর জল পান করেন।

উপায়: এই জলই কেনেন গ্রামের বহু মানুষ।

উপায়: এই জলই কেনেন গ্রামের বহু মানুষ। নিজস্ব চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ০৮:১৭
Share: Save:

ভোর-ভোর ঘুম থেকে উঠেই সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে হয় ইয়াকুব গাজিকে। পাটলি-খাঁপুর পঞ্চায়েতের তাড়াগোপালপুরের বাসিন্দা স্কুল পড়ুয়া ইয়াকুবকে গ্রাম থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে পাশের বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকায় যেতে হয় গোটা পরিবারের জন্য পানীয় জল আনতে। রোজকার রুটিন তার এটাই।

মঙ্গলবার বিশ্ব জুড়ে পালিত হল জলদিবস। তবে এদিনও ইয়াকুবের দৈনিক রুটিনে পরিবর্তন হয়নি।

ইয়াকুবের মতোই হাসনাবাদের পাটলি-খাঁপুর পঞ্চায়েতের বহু মানুষই পানীয় জলের জন্য রোজ ছুটে বেড়ান দূরদূরান্তে।

ইয়াকুবের কথায়, “শুনেছি আজ জলদিবস। অনেকে প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করছে। আমরাও প্রতিদিন সাইকেলের সামনে-পিছনে তিন-চারটে করে জলের পাত্র নিয়ে মিছিল করেই জল আনতে যাই!”

স্থানীয় সূত্রের খবর, পাটলি খাঁপুর পঞ্চায়েতে ১৯টি বুথ মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস। পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। কোথাও এখনও পাইপ লাইন ঢোকেনি। কয়েকটি টিউবওয়েল থাকলেও, তা থেকে আয়রন-যুক্ত অস্বাস্থ্যকর জল বেরোয় বলে অভিযোগ। বহু বছর আগে বাম জমানায় একবার কিছু পাইপ লাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছিল। কথা ছিল, মহিষপুকুরে পাম্পিং স্টেশন হবে। পাশের বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল আসবে। তবে সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।

কয়েক বছর আগে ট্যাংরা, মহিষপুকুর, বৌঠাকুরানির আবাদ-সহ কয়েকটি গ্রামে সৌরশক্তি চালিত যন্ত্রের সাহায্যে পুকুরের জল পরিস্রুত করে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

তবে তা-ও শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ফলে কয়েক কিলোমিটার দূরে বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই জল আনতে হয় গ্রামবাসীদের। কেউ কেউ বরুণহাট বা হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকা থেকেও খাওয়ার জল বয়ে আনেন। টিয়ামারি গ্রামের বাসিন্দা মাধব হাউলি, তাড়াগোপালপুরের বাসিন্দা দৌলত গাজিরা জানালেন, পাশের পঞ্চায়েতে গেলেই যে জল মেলে, তা নয়। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা নেওয়ার পরে তবেই বাইরের লোকজনকে জল নিতে দেওয়া হয়। তা করতে গিয়ে কখনও কখনও টাইম কলের জল চলে যায়। তখন আবার বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে ঘুরে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে জল আনতে হয়। ভিড় এড়াতে অনেকে রাতের দিকে বা খুব ভোরে উঠে জল আনতে চলে যান।

যাঁরা কষ্ট করে দূরে যেতে পারেন না, তাঁদের জল কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে জানালেন, আশেপাশের এলাকা থেকে বড় ড্রামে জল ভর্তি করে নিয়ে এসে গ্রামে বিক্রি করে অনেকে। ২০ টাকায় এক কলসি জল মেলে।

তা ছাড়া, বিভিন্ন সংস্থার বোলতবন্দি জলও বিক্রি হয়। ২০ লিটারের ড্রামের দাম পড়ে ১০ টাকা। পঞ্চায়েত এলাকায় এ রকম লাইসেন্সবিহীন ব্যবসাও গজিয়ে উঠেছে। এই জলের মান ভাল নয় বলে অভিযোগ অনেকেরই। তবু বাধ্য হয়ে তা-ই কিনে খান অনেকে।

অনেকে দূর থেকে গিয়ে জল আনতেও পারেন না। আবার জল কিনে খাওয়ারও সামর্থ্য হয় তো নেই। তাঁরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় টিউবওয়েলের অস্বাস্থ্যকর জল পান করেন। ঘেরিপাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধ পরিমল সর্দার বলেন, “দূর থেকে জল আনার বা কেনার ক্ষমতা নেই। তাই স্থানীয় একটি কলের জলই খাই। ওই জল একেবারেই পানের যোগ্য নয়।” তাড়াগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক গোলাম বারি গাজি বলেন, “এলাকার টিউবওয়েলগুলির জলে প্রচুর আয়রন। ওই জল চোখে-মুখে দিলেও জ্বালা করে। অনেকে এই জল খেয়ে সারা বছর ধরে পেটের সমস্যায় ভোগেন।”

স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান পারুল গাজি বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা বহুদিনের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার কল্লোল বিশ্বাস বলেন, “বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE