Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
garbage

কাটেনি অচলাবস্থা, জঞ্জালে ভরেছে বারাসতের রাস্তা

তত দিন  পুরনো ভাগাড় ব্যবহারের কথা আন্দোলনকারীদের জানানো হয়েছে।

নৈরাজ্য: যত্র তত্র এ ভাবেই পড়ে থাকছে জঞ্জাল। বুধবার, বারাসত-টাকি রোডের বিধান পার্কের সামনে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নৈরাজ্য: যত্র তত্র এ ভাবেই পড়ে থাকছে জঞ্জাল। বুধবার, বারাসত-টাকি রোডের বিধান পার্কের সামনে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

এক মাস অতিক্রান্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্দোলনের জেরে এখনও বন্ধ বারাসত পুরসভার ভাগাড়। যার জেরে শহরের জঞ্জাল সাফাই নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জমছে। অন্য দিকে, ভাগাড় সমস্যা দিন দিন জটিল হচ্ছে। পুরসভার অভিযোগ, ভাগাড়ে ভাঙচুর চালিয়েছে আন্দোলনকারীদের কয়েক জন। মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বুধবার বিকেলে পাল্টা মিছিল করেন ভাগাড় লাগোয়া কদম্বগাছির গ্রামের বাসিন্দারা।

পুরসভা জানিয়েছে, একটি বিকল্প জায়গার খোঁজ মিলেছে। সেখানেই নতুন করে ভাগাড় হবে। তত দিন পুরনো ভাগাড় ব্যবহারের কথা আন্দোলনকারীদের জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দ্রুত আলোচনা হবে। বর্তমানে জঞ্জাল ডাঁই করার কোনও স্থায়ী জায়গা না মেলায় ‘এখানে ওখানে’ জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। আগামী দিনে এ নিয়েও সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা পুর কর্তৃপক্ষের।

বারাসত শহর লাগোয়া কদম্বগাছি পঞ্চায়েত এলাকার কুবেরপুর-পিরগাছিতে জঞ্জাল ফেলে বারাসত পুরসভা। জমি কিনে ভাগাড় তৈরি করে বছর দশেক ধরে সেখানেই জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। সমস্যা শুরু বছর দুয়েক আগে। এলাকার চাষিদের অভিযোগ, ভাগাড়ের জঞ্জালে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। জঞ্জাল থেকে বেরোনো বিষাক্ত জলে কয়েকশো বিঘার ফসল নষ্ট হচ্ছে। ঊর্বরতা হারাচ্ছে চাষজমি। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় বলেও অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পুরসভা এ নিয়ে বেশ কয়েক বার স্থানীয় বাসিন্দা, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। গত জুলাই মাসে সমস্যা আরও জটিল হয়। আন্দোলন শুরু করেন এলাকার চাষিরা। ভাগাড়ে ঢোকার রাস্তায় বসে পড়ে ধর্না শুরু করেন তাঁরা। তার ফলে জঞ্জালের গাড়ি সেখানে ঢুকতে পারেনি। সে বার দিন পাঁচেক চলেছিল ওই আন্দোলন। অচলাবস্থা কাটাতে পুর কর্তৃপক্ষ তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন, ভাগাড়ের চার দিক পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। তাতে চাষের জমিতে বিষাক্ত জল যাবে না। সেই কাজ চলছে। নতুন করে জমি কিনে ভাগাড়ের এলাকা বাড়ানো হচ্ছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে যে সমস্যা ছিল, তা রয়েই গিয়েছে। তাই মাসখানেক আগে ফের আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা। ভাগাড়ে ঢোকার রাস্তা বাঁশ দিয়ে ঘিরে আটকে দেওয়া হয়। যার ফলে জঞ্জালের গাড়ি সেখানে ঢুকতে পারছে না। বেশ কয়েক বার আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এ দিকে, বারাসত শহরের বিভিন্ন এলাকায় জঞ্জাল জমছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে, বিভিন্ন সরকারি অফিসের দেওয়ালের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে জঞ্জাল। তা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়। সব থেকে খারাপ অবস্থা শহরের বাজারগুলিতে। বাজারে রোজই পচা আনাজ, আনাজের খোসা জমে। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় জঞ্জাল পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে সেখানেও। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি, ওখান থেকে ভাগাড় সরাতে হবে।

পুরসভার অভিযোগ, ভাগাড়ের ভিতরে ঢুকে সেখানকার জল তোলার পাম্প-সহ বেশ কিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাগাড় সরকারি সম্পত্তি। পুরসভার প্রশ্ন, এলাকার বাসিন্দাদের দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি ঘিরে রাখা হবে কেন? সেই জন্য নির্দিষ্ট কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবিতেও আন্দোলন শুরু করেছেন।

তবে আগের থেকে পরিস্থিতি অনেক ভাল হয়েছে। প্রথম সাত দিন তো শহরের জঞ্জাল তোলাই যায়নি। এখন অনিয়মিত ভাবে হলেও তা তোলা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলি ফেলা হচ্ছে কোথায়? পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য এবং জঞ্জাল সাফাই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাপস দাশগুপ্ত বলেন, “এখনও পর্যন্ত স্থায়ী জায়গা পাওয়া যায়নি। বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের বিভিন্ন জায়গায় জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে।” প্রশাসকমণ্ডলীর আর এক সদস্য সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলাশাসকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। ব্যারাকপুর রোডের ধারে একটা জায়গা দেখা হয়েছে। সেখানেই আমরা ভাগাড় তৈরি করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

garbage Dumping Ground Barasat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE