Advertisement
E-Paper

খুন করার জন্য ছুরি বানায় সঞ্জু

সঞ্জুকে নিয়ে তদন্তকারীরা যান খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণে। হালিশহরের বালিভারার যে মাঠের পাশে জলার ধারে সঞ্জু বাবুলকে ছুরি মেরে খুন করেছিল বলে অভিযোগ, সেখানে পৌঁছন সকলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:৫৪
সরেজমিন: ঘটনার পুনর্তদন্তে সঞ্জুকে নিয়ে এলাকায় গেল পুলিশ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সরেজমিন: ঘটনার পুনর্তদন্তে সঞ্জুকে নিয়ে এলাকায় গেল পুলিশ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

রোগাটে চেহারা। উস্কোখুস্কো চুল। পরনে নীল ডেনিম, নীল রঙের চেক শার্ট। নির্বিকার চোখমুখ।

মঙ্গলবার সকাল সা়ড়ে ১১টা নাগাদ বছর উনিশের সঞ্জু দাসের এই চেহারাটা পুলিশের গাড়ি থেকে নামতেই স্থানীয় মানুষজন রে রে করে তেড়ে আসেন। পুলিশ আগাগোড়া সঞ্জুকে ঘিরে রেখেছিল। জনতা তাকে নাগালের মধ্যে পায়নি।

সঞ্জুকে নিয়ে তদন্তকারীরা যান খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণে। হালিশহরের বালিভারার যে মাঠের পাশে জলার ধারে সঞ্জু বাবুলকে ছুরি মেরে খুন করেছিল বলে অভিযোগ, সেখানে পৌঁছন সকলে। এখনও চাপ চাপ রক্তের দাগ বৃষ্টিতে পুরোপুরি ধুয়ে যায়নি। কিছুটা দূরে জংলা ঘাসের মধ্যে পড়ে ছিল ছুরি। আঙুল দিয়ে সে দিকে দেখিয়ে দেয় সঞ্জুই। ঘাসপাতা ঘেঁটে উদ্ধার হয় সেই ছুরি।

ইঞ্চি সাতেকের ছুরিটির দু’দিকেই ধার। এই ধরনের ছুরি খোলা বাজারে সচরাচর মেলে না বলেই জানালেন তদন্তকারীরা। সে ক্ষেত্রে কোনও কামারশালা থেকে সেটি খুনের জন্যই তৈরি করানো হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ।

কী ভাবে প্রেমিকা অঞ্জুর স্বামী বাবুলকে খুন করেছিল সঞ্জু?

ঘটনাস্থল: খুনের পরে এই গাছের গুঁড়িতে বসেছিল সঞ্জু।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে পুলিশকে সে সব কথা জানায় সঞ্জু। তদন্তকারীদের সঞ্জু বলে, বেশি রাতে বাবুলকে নিয়ে সাইকেল করে ফেরার পথে জলের ধারে শৌচকর্মের অছিলায় দাঁড়ায় সে। বাবুল তখন নেশায় টলমল। ভাল মতো দাঁড়ানোর ক্ষমতাও নেই। ওই অবস্থায় নিজের জামার আড়াল থেকে ছুরি বের করে সঞ্জু। পিছন থেকে বাবুলের মুখ চেপে ধরে। আড়াআড়ি ভাবে টেনে দেয় গলায়। ছিটকে বেরোয় রক্ত। গলা দিয়ে শব্দটুকু বের করার সুযোগ পাননি বাবুল। কাঠের গুঁড়ির পাশে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সঞ্জু আরও কয়েকবার ছুরির কোপ মারে তাঁর গলায়।

পিছনে দাঁড়িয়ে সঞ্জুর সঙ্গী সুভাষ তখন রীতিমতো কাঁপছে। এই যুবক নেহাতই বন্ধুকৃত্য করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। খুনে তার সরাসরি ভূমিকা ছিল না। সুভাষকে সঞ্জু বলেছিল, অঞ্জুকে সে ভালবাসে। মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত অঞ্জুর জীবন। বাবুলকে সরিয়ে দিয়ে অঞ্জুকে নিয়ে সংসার পাততে চায় সে। মদের ঘোরে চুর সুভাষ সায় দেয় তাতে। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘বিনে পয়সায় মদ-মাংস খেতে গিয়ে সুভাষের এই দুর্গতি বলে মনে হচ্ছে। তবে আরও জেরা করা দরকার।’’

অস্ত্র: এই সেই ছুরি। নিজস্ব চিত্র।

সঞ্জু জানিয়েছে, খুনের পরে বাবুলের রক্তাক্ত দেহ যখন প়ড়ে আছে জলে-কাদায়, পাশে গাছের গুঁড়ির উপরে বসে খানিকক্ষণ হাঁফায় সে। অপরাধের হাতেখড়ি ছিল না। টাটকা রক্ত দেখে তখন উত্তেজনায় রীতিমতো কাঁপছে সঞ্জু। বাবুলের শরীরটা ছটফট করতে করতে না থামা পর্যন্ত সে বসে ছিল পাশে। যখন নিশ্চিত হয়, দেহে আর প্রাণ নেই, প্রেমিকাকে সেখানে বসেই ফোন করে সঞ্জু। বলে, ‘কাজ শেষ।’ এরপরে সুভাষকে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে এলাকা ছাড়ে।

Murder Case Crime Bablu Das Murder Case Bijpur বীজপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy