Advertisement
০২ মে ২০২৪

বন্ধ অঙ্গনওয়াড়ি, খাবার জোটে না শিশুদের

অপুষ্টি ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে চালু হয়েছে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প। আর সেই প্রকল্পের কাজ মাসের পর মাস বন্ধ। ফলে সমস্যায় পড়েছে শিশু ও প্রসূতিরা।

এই বারান্দাতেই চলত পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।

এই বারান্দাতেই চলত পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

অপুষ্টি ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে চালু হয়েছে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প। আর সেই প্রকল্পের কাজ মাসের পর মাস বন্ধ। ফলে সমস্যায় পড়েছে শিশু ও প্রসূতিরা। রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের কৌতলা উত্তরপাড়ার ৪৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তিন মাস ধরে বন্ধ। এলাকার দুঃস্থ শিশুরা ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপরে ভরসা করেই থাকে। এমনিতেই তারা অপুষ্টিতে ভোগে। তার মধ্যে দিনের পর দিন অঙ্গনওয়াড়ি বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন অভিভাবকেরা।

ওই ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক প্রশান্ত রায় জানান, অঙ্গনওয়াড়িতে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে দেখে ঝামেলা হয়েছিল। সে সময়ে ওই অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীকে পনেরো দিন বরখাস্ত করা হয়েছিল। তারপর থেকেই সেটি বন্ধ।

বছর পনেরো আগে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি একটি পরিত্যক্ত বাড়ির বারান্দায় চালু হয়। কোনও শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। পলিথিন ঢাকা ছোট ঘরের মধ্যেই চলে কচিকাঁচাদের মিড-ডে মিলের রান্নার কাজ। ওই কেন্দ্রে পরিষেবা দেওয়া হয় শিশু ও গর্ভবতী মিলিয়ে ৪৫ জনকে। রয়েছেন একজন কর্মী ও সহায়িকা।

কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের ওই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল, শিশুদের অপুষ্টি দূর করা। প্রসূতি ও গর্ভবতীদের পুষ্টির জোগান দেওয়া, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করাও ওই প্রকল্পের আওতায় পড়ে। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি বন্ধ থাকায় এই সব কাজগুলিও বন্ধ রয়েছে ওই এলাকায়।

কেন বন্ধ হল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র?

২৫ জুলাই কচিকাঁচাদের অভিভাবকেরা অভিযোগ তোলেন, শিশুদের খাবারের গুণমান নিম্নমানের। ওই কেন্দ্রের কর্মী জ্যোৎস্না হালদার দুর্নীতিতে জড়িত বলেও তাঁদের অভিযোগ। এ সবের জেরেই শিশুদের ওই কেন্দ্রে পাঠানো বন্ধ করে দেন তাঁরা। অভিভাবক দীপ্তি মণ্ডল, প্রতিমা পুরকাইত, কৃষ্ণধন হালদারদের অভিযোগ, শিশুদের যে খাবার দেওয়া হতো, তাতে পোকা থাকত। এমনকী, খাবার পরিমাণেও ছিল কম।

কিন্তু কেন্দ্রটি ফের চালু করার জন্য রাজনৈতির দলের নেতৃত্বে গ্রামবাসী এবং জ্যোৎস্নাদেবীকে নিয়ে সভাও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সমাধান সূত্র বেরোয়নি। গ্রামবাসীদের দাবি, ওই কেন্দ্রে শিশু ও প্রসূতি ছিল ৪৫ জন। কিন্তু খাতায় দেখানো হয়েছে ৫৯ জন। অভিযোগ, বছরের পর বছর খাবার জিনিসপত্র তিনি নিয়েছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জ্যোৎস্নাদেবীর বক্তব্য, ‘‘রেশন থেকে যেমন মানের চাল, ডা‌ল, ছোলা আসে, তেমনই আমি ওদের দিই। তা ছাড়া, শিশুখাদ্যের জন্য যে পরিমাণ রেশন দেওয়া হয়, তাতে সকলের পেট পুরে খাওয়ানো সম্ভব নয়। তাই অতিরিক্ত সংখ্যা দেখিয়েছিলাম।’’

জ্যোৎস্নাদেবীর এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নন অভিভাবকদের বড় অংশই। তাঁরা ছেলেমেয়েদের কেন্দ্রে পাঠানোই বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে তাদের পুষ্টিতে ঘাটতি হতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্ট অনেকেরই। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে বলে
জানিয়েছেন প্রশান্তবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scarcity malnutrition anganwadi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE