স্কুলগুলিতে সবে মাত্র শেষ হয়েছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষা। শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের রায় দেওয়ার সময় থেকেই স্কুলগুলিতে পার্বিক পরীক্ষা চলছিল। নিয়মিত পঠনপাঠনের চাপ কম ছিল। পরীক্ষা শেষে স্কুলের রুটিনমাফিক লেখাপড়া ও পরীক্ষার খাতা দেখা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে স্কুলগুলি। বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার খাতা নির্দিষ্ট শিক্ষকের অভাবে কে দেখবেন, তা নিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ।
ভাঙড় গার্লস হাই স্কুলের সাত জন শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। তাঁরা স্কুলে আসছেন না। জীবনতলার হাওড়ামারি হাই স্কুলেরও চাকরিহারা ছ’জন শিক্ষকের সকলেই অনুপস্থিত রায় বেরোনোর দিন থেকে। ভাঙড় গার্লস হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নূপুর শিকদার বলেন, ‘‘এমনিতেই শিক্ষক কম ছিল। তার উপরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষিকারা না থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষকেরা অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে বা দু’টো ভাগে পরীক্ষাপর্ব শেষ করা হয়েছে। পরীক্ষা তো হল, এ বার নির্দিষ্ট বিষয়ের খাতা কে দেখবেন?’’ একই প্রশ্ন তুলেছেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের হাজিনগর আদর্শ হিন্দি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্রনাথ দুবে। তিনি বলেন, ‘‘সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী, ১৮ জন শিক্ষক বাতিল হয়েছেন। পর্ষদের কাছে অনুরোধ করেছি, খাতা দেখা কী করে হবে, তা জানাতে।’’
মৌসুনি বালিয়াড়া কিশোর হাই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক ছিলেন ১৩ জন। চাকরি চলে যায় ৬ জন শিক্ষক এবং এক শিক্ষাকর্মীর। বর্তমানে স্কুলে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম পার্বিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলেও গোল বেধেছে খাতা দেখা নিয়ে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরিন্দম মাইতি বলেন, ‘‘কোনও রকমে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যে বিষয়ে শিক্ষক নেই, সেই বিষয়ের খাতা অন্য কোনও শিক্ষক তো দেখতে পারবেন না। ফল প্রকাশে সমস্যা হবে। যে শিক্ষকেরা চলে গিয়েছেন, তাঁদের অনুরোধ করব, খাতাগুলি দেখে দেওয়ার জন্য।’’
নহাটা সারদা সুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দিরের আট জনের চাকরি গিয়েছে। রসায়নের শিক্ষিকা নেই। ফলে রসায়নের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রসায়নের ক্লাস বন্ধ। কিছু স্কুলে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকই নেই। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসন্তীর ফুল মালঞ্চ ঋতুভকত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অম্বরীশকুমার দত্ত বলেন, ‘‘আমার স্কুলে এক জন মাত্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রয়েছেন, বাকিরা সকলেই চাকরি হারিয়েছেন। ফলে ওই এক জনের উপরে মারাত্মক চাপ পড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান কী বুঝতে পারছি না।’’ গোসাবার মঙ্গলচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রায় সব শিক্ষক অনুপস্থিত। ন’জন স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে আট জনের চাকরি গিয়েছে। এক জন মাত্র শিক্ষক শঙ্কর সর্দার রয়েছেন। তিনি বলেন, "আমি বাংলার শিক্ষক, বাংলা খাতা না হয় আমি দেখলাম, কিন্তু বাকি বিষয়ের খাতা কে দেখবে জানি না।’’
এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকেরা সেই বিষয়ের পরীক্ষার খাতা যে ভাবে দেখবেন সেটা বাংলার শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। তেমনই সংস্কৃত পরীক্ষার খাতা তো আর জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষকের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। কী যে রেজাল্ট হবে কে জানে!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)