Advertisement
E-Paper

মিড ডে মিল চলবে কদ্দিন, সংশয়ে স্কুল

মুড়িগঙ্গার কোম্পানিছাড় গ্রামের খোকন মণ্ডলের দেড় বছরের ছেলের পেটের টিউমার এখনও অস্ত্রোপচার করানো গেল না।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০২
চিন্তিত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। নিজস্ব চিত্র।

চিন্তিত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। নিজস্ব চিত্র।

মুড়িগঙ্গার কোম্পানিছাড় গ্রামের খোকন মণ্ডলের দেড় বছরের ছেলের পেটের টিউমার এখনও অস্ত্রোপচার করানো গেল না। কারণ, পুরনো টাকা নেয়নি নার্সিংহোম। গত বুধবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে শিশুটিকে। পুরনো টাকা জমা করে মাত্র ৪ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন পান বরজের মালিক খোকনবাবু। এখন তাঁর মাথায় হাত। এই ক’টা টাকায় ছেলের অপারেশন হবে না বুঝতে পারছেন। কিন্তু উপায় কী, বুঝে উঠতে পারছে না।

খোকনবাবুই শুধু নন, সাগরের প্রত্যন্ত অঞ্চল মুড়িগঙ্গা ১ এবং ২ পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার মানুষ ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন। সমস্যা দেশজুড়েই চলছে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা, বন্ধ হতে বসেছে মিড ডে মিলের রান্না, নির্মল শৌচাগার থেকে নানা রকম প্রকল্পেও প্রভাব পড়ছে।

কোম্পানিছাড় গ্রামেরই মধ্যপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের খাবার সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রধান আভারানি মণ্ডল। তিনি জানালেন, ১৮ কিলোমিটার দূরে ব্যাঙ্ক। তিন দিন লাইনে দাঁড়ানোর পরে মাত্র দু’হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু স্কুলে একদিনেই ৪৫০-৫০০ টাকা খরচ হয় মিড ডে মিলের জন্য।

আভারানিদেবী বলেন, ‘‘কী কষ্ট করে ব্যবস্থা করে বাচ্চাদের খেতে দিচ্ছি, আমরাই জানি।’’ তিনি জানালেন, গোষ্ঠীর একজন মহিলা হাসপাতালে ভর্তি। ঋণের দরকার ছিল, কিন্তু পাননি।

সমস্যায় রয়েছেন গ্রামের কৃষি পেনশনভোগী বিষ্ণুহরি মাইতিও। বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের বামনখালি শাখায় এসেছিলেন পেনশন তুলতে। মাত্র ৭৫০ টাকা পেনশন পান মাসে। কিন্তু তা-ও এ বার মেলেনি। বললেন, ‘‘আমি দেড় হাজার টাকার পুরনো নোট জমা দিয়ে মাত্র ৫০০ টাকা এ দিন পেলাম। এখনও পেনশনের বাকি টাকা কবে পাব তা বলতে পারছে না ব্যাঙ্ক।’’

মায়ের কোলে অসুস্থ শিশু।

প্রত্যন্ত এলাকায় এ রকম ছোট ছোট কিছু ব্যাঙ্কের উপরেই ভরসা করেন মানুষ। ওই ব্যাঙ্কের বামনখালি শাখার ম্যানেজার সত্যেন মান্না বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। সকলকে ওই টাকা ভাগ করে দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ১০টায় ফের ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে। সব গ্রাহককেই বুঝিয়ে ব্যাঙ্ক চালাতে হচ্ছে।’’ সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে এই ব্যাঙ্কের।

বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা এবং সাগরে সাব পোস্ট অফিসগুলির অবস্থাও ভাল নয়। রুদ্রনগর শাখার সাব পোস্ট অফিসে এত দিন পর্যন্ত ২ হাজার টাকার বেশি তোলা যায়নি। মঙ্গলবার থেকে তা ৪ হাজার করা হয়েছে। কিন্তু পুরনো নোট জমা করার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকায়। তাতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মানুষকে। সাগর এসবিআই রুদ্রনগর শাখায় সকাল ৭টায় দেড়শো জনের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন নগেন্দ্রগঞ্জের বাসিন্দা গুরুপদ দাস। তিনি বলেন, ‘‘তিন দিন ঘুরে গিয়েছি। বেলা আড়াইটের পরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের হাতে কুপন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউন্টারে ১০ হাজারের বেশি টাকা মিলছে না। ছোট ছোট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাগুলি থেকে ১ হাজার টাকার বেশি মিলছে না।

এ দিকে, এই পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সারের বেচাকেনা। পেরিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল লাগানোর সময়ে।

প্রায় হাত কামড়াচ্ছেন মুড়িগঙ্গা ১ পঞ্চায়েতের কৃষক অনিল মাইতি। একটি পানের বরজ আর দেড় বিঘে জমির উপরে চার জনের সংসার ওই কৃষকের। তাঁর কথায়, ‘‘পানের বরজের শ্রমিকদের টাকা দিতে পারছি না। একটু কপি, আলু গাছ লাগাব। সার, কীটনাশক মিলিয়ে ১০-১২ টাকা প্রয়োজন ছিল। ৫ হাজার টাকার পুরনো নোট দিয়ে পেয়েছি মাত্র ২ হাজার টাকা। দিন বয়ে যাচ্ছে। এরপর ফসল লাগানো আর না লাগানো সমান।’’

মার খেতে বসেছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। মুড়িগঙ্গার হেন্দলকেটকির সার, কীটনাশক ব্যবসায়ী দেবকুমার গিরি ছোট সার ব্যবসায়ী। মুড়িগঙ্গা বাজারে দোকান। তাঁর কথায়, ‘‘দিনে পাঁচ হাজার টাকার বেচাকেনা। ১৫ শতাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরনো নোট নিতে পারছি না। আর বাকিতে বেশি দিন দেওয়া যায় না। আর ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না পাওয়ার জন্য মালও তুলতে পারছি না। প্রায় ৫০ শতাংশ কৃষক আসা বন্ধ করে দিয়েছে।’’

মার খেতে বসেছে সরকারি প্রকল্পও। টাকার অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে নির্মল শৌচাগার তৈরির কাজ। কোম্পানিছাড়ের নির্মল শৌচাগারের ঠিকাদার বুদ্ধদেব গাউনিয়ার অধীনে কাজ করেন ৪০ জন শ্রমিক। তাঁদের বেতন বন্ধ করে দিতে হয়েছে টাকার অভাবে। গত ৭ দিন থেকে এলাকায় একটিও কাজ হয়নি বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে।

Mid day Meal demonetization School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy