E-Paper

ছুটি ঘোষণা, সিলেবাস শেষ করা নিয়ে চিন্তায় স্কুল

এই সময়কালে স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদেরও ছুটি থাকবে। তবে স্কুল খোলার পরে পড়ুয়াদের স্বার্থে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে শিক্ষকদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৪
Mother taking her daughter to school

গরমে স্কুলের পথে, ছাত্রীর মাথায় নেই হেলমেট। ছবি সুজিত দুয়ারি

তীব্র গরমের কারণে সোমবার থেকে রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিকাশভবন জানিয়েছে, তাপপ্রবাহের কারণে আপাতত চলতি সপ্তাহে ছুটি থাকবে রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধই থাকবে। এই সময়কালে স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদেরও ছুটি থাকবে। তবে স্কুল খোলার পরে পড়ুয়াদের স্বার্থে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে শিক্ষকদের। ছুটির কারণে পড়ুয়ারা যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে তাঁদের।

গোটা বিষয়টি নিয়ে দুই জেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে। বনগাঁর একটি স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক নির্মল সরকার বলেন, ‘‘এই গরমে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সোমবার থেকে স্কুল ছুটি হওয়ায় নিশ্চিন্তে থাকব। আগে তো সুস্থ থাকতে হবে। তারপর সিলেবাস শেষ করার বিষয়টা আসছে।’’ বনগাঁর বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমর্থন জানিয়েছেন এই সিদ্ধান্তকে। তাঁদের দাবি, এমনিতেই স্কুলে হাজিরার সংখ্যা খুব কমে গিয়েছিল। অনেক পড়ুয়া স্কুলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘সব শ্রেণিকক্ষে আবার পাখা নেই। ফলে গরমে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। ছুটি দেওয়ায় ভাল হয়েছে।’’

বিপক্ষ মতও মিলেছে। হাসনাবাদের তকিপুর রাজলক্ষ্মী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহফুজ আহমেদ জানান, একাদশ শ্রেণির প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ১৮ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ভোকেশন্যাল কোর্সের পড়ুয়াদের পরীক্ষা চলছে স্কুলে। ২১ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বর অনলাইনে আপলোড করার নির্দেশও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ ছুটি হয়ে যাওয়ায় কী ভাবে পরীক্ষা ও অন্যান্য কাজগুলি সম্পন্ন হবে, তার দিশা পাচ্ছি না। গতবারও লম্বা ছুটির কারণে সিলেবাস শেষ করতে সমস্যা হয়েছে। ছুটির ফলে পড়াশোনার ঘাটতি পূরণ করার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা পর্ষদ থেকে দেওয়া না হলে এ বছরও সমস্যা হবে।’’

হিঙ্গলগঞ্জ কনকনগর সৃষ্টিধর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই লম্বা ছুটির জেরে আবারও স্কুলছুট, বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়ে যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। পাশাপাশি, গরমের ছুটি পড়ুয়ারা কী ভাবে কাটবে, কী ভাবে পড়াশোনা করবে তা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা করার আগেই হঠাৎ ছুটি পড়ায় আতান্তরে পড়েছি আমরা।’’

দেগঙ্গা এলাকায় অভিভাবকদের একাংশ ছুটির সিদ্ধান্তে খুশি। তাঁরা জানালেন, এলাকার বহু পড়ুয়া স্কুলে যায় পায়ে হেঁটে। চড়া রোদে ওরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেক স্কুলে পানীয় জলেরও সমস্যাও রয়েছে। শিক্ষকদের দাবি, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের জন্য ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। তবে ইতিমধ্যে অনেক স্কুলে প্রথম পর্বের মুল্যায়ন শুরু হয়েছে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়েছে। ছুটি ঘোষণায় পরীক্ষা পিছিয়ে যাবে। দ্বিতীয় পর্বের জন্য সময়ও কমে যাবে।

ডায়মন্ড হারবারে বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, একাদশ শ্রেণির প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা, বৃত্তিমূলক শাখার একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, মাদ্রাসার প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন বাকি রয়েছে। গরমের ছুটির পর স্কুল খুললে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে কী ভাবে সিলেবাস শেষ করা হবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না শিক্ষকেরা।

গত বছর অতিরিক্ত ছুটির কারণে ভাঙড়ের বিভিন্ন স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ বারও সেই সমস্যা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার ছেলে ভাঙড় হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। গত বছর পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ হয়নি। এ বছরও যদি এ রকম হয়, তা হলে ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’’ ভাঙড় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ সরকার বলেন, ‘‘গত বছর সমস্যা হয়েছিল ঠিকই, তবে আমরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করেছিলাম। এ বছরও চেষ্টা করব পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ করার।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Summer Vacation Summer Season

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy