Advertisement
E-Paper

মেলেনি ক্ষতিপূরণ

গত ৯ মে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় ওই গ্রামে সিলিকোসিসে আক্রান্ত মৃত ৫টি পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনও সেই টাকা মৃতের পরিবারগুলি পায়নি বলে অভিযোগ।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০২:৪১

বছর পাঁচেক আগে পাথর খাদানে কাজ করতে গিয়ে সিলিকোসিসে মারা গিয়েছিলেন মিনাখাঁর ২০ জন। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮৯ জন। অথচ এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পেল না উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর গোয়ালদহ গ্রামের সিলিকোসিসে মৃতের পরিবারেরা।

গত ৯ মে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় ওই গ্রামে সিলিকোসিসে আক্রান্ত মৃত ৫টি পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনও সেই টাকা মৃতের পরিবারগুলি পায়নি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে মিনাখাঁর ওই সব গ্রামগুলিতে কোনও রকম অনুষ্ঠান বা সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়নি বলে জানান গ্রামবাসীরা। অথচ এই গ্রামগুলিতেই সচেতনতা শিবিবের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের উদাসীনতায় সিলিকোসিসে আক্রান্ত মৃত পরিবারগুলি ক্ষতিপূরণ পেলেন না।’’

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘এমন কোনও নির্দেশিকা আমার কাছে আসেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

সোমবার সকালে গোয়ালদহ গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মিনাখাঁর বিডিও সৈয়দ আহমেদ ওই গ্রামে গিয়ে আক্রান্ত পরিবারগুলির হাতে ফল তুলে দিচ্ছেন। বিডিওকে ঘিরে আক্রান্ত পরিবারগুলি তাঁদের নানা অভাবের কথা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ চাল, সরকারি প্রকল্পে ঘর ও চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদনও করেন। বিডিও সবরকম ভাবে পাশে থেকে তাঁদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন।

২০০৯ সালে আয়লার পরে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর গোয়ালদহ, দেবীতলা, সন্দেশখালির ১ ব্লকের রাজবাড়ি, সন্দেশখালি ২ ব্লকের ঝুপখালি, জেলিয়াখালি এলাকার কয়েকশো গরিব মানুষ কাজের তাগিদে আসানসোল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, কুলটি এলাকায় পাথর খাদানের কাজে যান। ২০১২ সালে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে গ্রামে ফিরতে শুরু করেন অনেকে। তাঁদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি-সহ নানা উপসর্গ ছিল।

২০১২ সালে প্রথম মারা যান হোসেন মোল্লা। চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে, এই সন্দেহে আবুল পাইক, স্মরজিৎ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, মফিজুল মোল্লাকে নিয়ে ভেলোরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে ধরা পড়ে, প্রত্যেকেই সিলিকোসিসে আক্রান্ত।

জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশ ও শ্রম দফতরের আইনে বলা আছে, যদি কোনও ব্যক্তি পেশাগত কাজে গিয়ে কোনও রোগে আক্রান্ত হন, তা হলে ওই ব্যক্তি সরকারি ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ নিয়ে ২০১৪ সালে একটি সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানায়, হাইকোর্টেও মামলা করা হয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট চায়। রাজ্য সরকারের রিপোর্টের উপর আস্থা রাখতে না পেরে পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়কে আরও একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। সেইমতো বিশ্বজিৎবাবু আক্রান্ত গ্রামগুলি ঘুরে একটি রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, শ্রম দফতর, পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দায়িত্ব থাকলেও কেউই আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ায়নি। এরপরেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ৯ মে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় সিলিকোসিসে আক্রান্ত মৃত মনিরুল মোল্লা, মুজাফ্ফর মোল্লা, ভীষ্ম মণ্ডল, আব্দুল পাইক, বিশ্বজিৎ মণ্ডলদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

Silicosis Minakhan BDO Compensation মিনাখাঁ সিলিকোসিস ক্ষতিপূরণ বিডিও
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy