Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এখনও রোখা গেল না  ছোট ইলিশের কারবার 

গত জুলাই মাসে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে কলকাতার বিভিন্ন মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যেরাও ছিলেন। ছিলেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা।

বাজার: দেদার বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ। উলুবেড়িয়া বাজার।

বাজার: দেদার বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ। উলুবেড়িয়া বাজার।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪০
Share: Save:

নজরদারি, প্রচারের পরেও বাজারে দিব্যি মিলছে ছোট ইলিশ। অথচ এ বার মৎস্যজীবী এবং আড়তদারেরা এক রকম শপথ নিয়েছিলেন, তাঁরা ছোট ইলিশ ধরবেন না, কেনাবেচা করবেন না। রাজ্যের মৎস্যজীবীদের সব সংগঠন গত জুলাই মাসে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে কলকাতার বিভিন্ন মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যেরাও ছিলেন। ছিলেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালানো-সহ বেশ কয়েক দফা কর্মসূচি নেওয়া হয়।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থতি বলছে, বাজারে এখনও চোরাগোপ্তা মিলছে ছোট ইলিশ। সে সব আসছে কোথা থেকে?
মৎস্যজীবীদের সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে সুন্দরনের বেশিরভাগ জায়গায় মৎস্যজীবীরা ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করেছেন। তবে নামখানা এবং ফ্রেজারগঞ্জ বন্দরে এখনও ছোট ইলিশ ধরা চলছে। সাধারণত ন’ সেন্টিমিটারের থেকে ছোট জাল দিয়ে ছোট ইলিশ ধরা হয়। এই জাল নিষিদ্ধ। এই দু’টি জায়গায় এখনও ছোট জাল নিয়েই সমুদ্রে যাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। তার ফলে টন টন ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে।
মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন, কিছু ছোট ইলিশ বড় জালেও ধরা পড়বে। এটা কোনও ভাবে এড়ানো যাবে না। কারণ, বড় ইলিশের ঝাঁকে কিছু ছোট ইলিশ বেশির ভাগ সময়ে থাকে। বড় জালেও তা ধরা পড়ে। একবার জাল থেকে তুললে ইলিশ মাছ বাঁচানো যায় না। কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি ছোট ইলিশ ধরা হচ্ছে। তার মানে ছোট জাল ব্যবহার করা হচ্ছেই।
গত রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কাকদ্বীপের অক্ষয়নগরে ছোট ইলিশ বোঝাই সাতটি লরি আটক করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপের ওই এলাকার অধিকাংশই মৎস্যজীবী। কাকদ্বীপে ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ হলেও অন্যান্য এলাকায় তা না হওয়ায় রুখে দাঁড়ান। ডায়মন্ড হারবার পাইকারি বাজারে যাওয়ার আগে তারা লরি দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চালায়। ছোট ইলিশের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সেই ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিলামে তোলা হয়। কিন্তু কোনও ব্যবসায়ীই নিলামে দর হাঁকেননি। ফলে সেই ইলিশ মাটি খুঁড়ে পুঁতে দেওয়া হয়। এতে উৎসাহিত মৎস্য দফতরের কর্তারা। কারণ, ব্যবসায়ীদের অঙ্গীকার ছিল, তাঁরা ছোট ইলিশ কিনবেন না।
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বাজারে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে বুঝে এক শ্রেণির মৎস্যজীবী গাড়ি করে ছোট ইলিশ শিয়ালদহে নিয়ে আসছেন। আগে থেকে আড়তদারদের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়ে থাকে। সেই যোগসাজসেই সেখান থেকে ছোট ইলিশ ছোট গাড়িতে করে বিভিন্ন বাজারে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
শিয়ালদহ মৎস্য ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘আমরা কড়া নজরে রাখছি। অধিকাংশ আড়তদার এ বার ছোট ইলিশ কিনছেন না। তবে কেউ কেউ চোরাগোপ্তা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি, তা যাতে না হয়।’’ তিনি মনে করেন, বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ছোট জায় বাজেয়াপ্ত করুক মৎস্য দফতর।
সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎসজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘আমাদের চেষ্টা জারি আছে। বিভিন্ন এলাকার মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি। যাতে আটকানো যায়, সে জন্য ফের কর্মশালা করা হবে।’’
মৎস্য দফতরের ডায়মন্ড হারবারের সরকারী অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘‘এ বার আমরাও কড়া পদক্ষেপ করব। প্রয়োজনে নিয়ম করে অভিযুক্ত ট্রলারের সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Fish Fishery Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE