বনগাঁ পুরসভার ছয় কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে হামলার অভিযোগ উঠল। বুধবার রাতের অন্ধকারে তাঁদের বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছে, গালিগালাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের একাংশ দাবি করেছেন, এটা আসলে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। বিজেপিও একই অভিযোগ করেছে। যদিও তৃণমূল সে কথা মানেনি। যে কাউন্সিলরদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে, তাঁদের নিয়ে বৃহস্পতিবার থানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বালা ঠাকুর।
বুধবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিখা ঘোষ এবং তাঁর স্বামী, তথা দুই নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়ার্ড সভাপতি উত্তম ঘোষ এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পা মহন্ত, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বন্দনা দাস কীর্তন-সহ ৬ জন কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কাউন্সিলর শিখা জানান, তাঁর বাড়ির গেটের সামনে মদ্যপান করা হয়েছে। অন্যদিকে, শম্পার বাড়ির সামনে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ।
শম্পার স্বামীর দাবি, বুধবার বনগাঁ পুরসভার যে কাউন্সিলরেরা পুরপ্রধান গোপাল শেঠকে সরানোর অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন করেননি, বেছে তাঁদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শর্মিলা দাস বৈরাগী বলেন, অনাস্থার কাগজে সই না করায় জেলা সভাপতি দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
বনগাঁ পুরসভায় ২২টি ওয়ার্ড। ২০টি তৃণমূলের দখলে। একটি কংগ্রেস এবং একটি বিজেপির দখলে। সম্প্রতি পুরপ্রধান গোপালকে ইস্তাফার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি ভাইস চেয়ারম্যানকে জ্যোৎস্না আঢ্যকে পাল্টা অপসারণ করেন। বিষয়টি হাই কোর্টে যায়। গোপাল জানিয়ে দেন, তিনি ইস্তফা দেবেন না। কারণ, বিষয়টি বিচারাধীন। সুরজিৎ দাস কার্যকরী চেয়ারম্যানে দায়িত্ব নিতে বলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস ১৫ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করেন। গোপালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। ন’জন কাউন্সিলর অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন। অভিযোগ, যাঁরা করেননি, তাঁদের বাড়ির সামনে হামলা হয়েছে।
সাংসদ মমতা এই বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া ফেসবুক লাইভ করে দাবি করেছেন, বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে যাঁরা সমর্থন করেনি, সেই কাউন্সিলরদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বনগাঁর মানুষ রাস্তায় নামবেন।
গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ মানতে নারাজ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সহ-সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ। তাঁর দাবি, বিরোধীদের মদতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাঁর কথায়, ‘‘বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠকে দলের নির্দেশ অনুযায়ী ইস্তফা দিতে বলা হয়েছিল। তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনৈতিক ভাবে এক কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা পৌর-আইন বিরোধী। তাই বেশ কিছু কাউন্সিলরেরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন। সেখানে কয়েক জন কাউন্সিলর সই করেননি। ঘটনাচক্রে যাঁরা সই করেননি, তাঁদের বাড়িতেই এই ঘটনা ঘটায় তা কিছুটা সন্দেহজনক।’’