সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রলার। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করলেন কাকদ্বীপের বরফকল শ্রমিকরা। মঙ্গলবার মালিক, শ্রমিক এবং শ্রম দফতরের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সমাধানসূত্র বের হয়নি। ধর্মঘটের ফলে মাছের উৎপাদনে টান পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বরফ ছাড়া ট্রলারে করে মাছ নিয়ে আসা যাবে না। তবে শ্রম দফতরের কর্তাদের আশ্বাস, ফের বৈঠকে বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হবে।
কাকদ্বীপে ১৭টি বরফকল রয়েছে। সেগুলিতে প্রায় ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। দৈনিক প্রায় ৬ হাজার কুইন্ট্যাল বরফ উৎপাদন হয়। বরফকলের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, আড়াই বছর অন্তর বরফ শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়। সেই অনুযায়ী, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রমিকদের পুরনো বেতন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তারপর থেকে নতুন বেতন বৃদ্ধি হয়নি। শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর জন্য বার বার দাবি জানালেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।
কাকদ্বীপ বরফকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি পাঁচুগোপাল হালদারের দাবি, ‘‘মঙ্গলবার কলকাতায় ডেপুটি শ্রম কমিশনারের কাছে বেতন বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠকে মালিক পক্ষ মাত্র ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কথা বলছেন। আমরা তাতে রাজি নই। শ্রমিকদের সংসার চলছে না। তাই তাঁরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। মালিকপক্ষ ইতিবাচক আলোচনায় বসলে আমরা রাজি।’’
সুন্দরবন আইস প্ল্যান্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অশোক দেবনাথের পাল্টা দাবি, ‘‘গত বার তৃণমূলের রাজ্য স্তরের এক শ্রমিক নেত্রীর চাপে ৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই বেতন দিতে গিয়ে বাজারে ঋণ করতে হয়েছে। এখন ফের শ্রমিকেরা ৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন। সেটা মানা সম্ভব নয়। সে রকম হলে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে।’’
কাকদ্বীপের সহকারী শ্রম কমিশনার দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি ঠিকই, কিন্তু দু’পক্ষকে নিয়ে আবার বসতে চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বরফকল শ্রমিকেরা ন্যূনতম বেতন কাঠামোর আওতায় আসবেন কিনা, তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। মালিকপক্ষ তাই ধীরে এগোতে চাইছেন।
এই টানাপড়েনে বাঙালির পাতে মাছে টান পড়বে না তো? বরফকল শ্রমিকেরা ধর্মঘট শুরু করায় সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ থেকে প্রায় ৭০০টি ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। মৎস্যজীবীরা কমিশন ভিত্তিক কাজ করেন। মাছ ধরা বন্ধ থাকলে তাঁরা কমিশন পাবেন না। মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি বলেন, ‘‘মালিক-শ্রমিক মিলে সমঝোতা করে নিন। কারণ তাদের দেনা-পাওনার সমস্যায় মৎস্যজীবীদের ক্ষতি হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy