মৌসুমী দাস।
বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া সেরে সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল মেয়েটি। পৌঁছতে পারেনি। মাঝপথে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমী দাসের (১৭)।
সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাবরা থানার মছলন্দপুর এলাকায় হাবরা-বসিরহাট সড়কে। মৌসুমী পড়ত মছলন্দুপুর ভূদেব স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। পুলিশ তার দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
এ দিকে, ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা রাস্তায় নেমে পড়ে। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই রাস্তায় বেআইনি ভাবে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। সে কারণেই বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দিনের দুর্ঘটনার পিছনেও দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে দায়ী করছেন তাঁরা। এ দিন ঘটনার পরে পুলিশ ট্রাকটি আটক করেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অন্য একটি ট্রাকও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
গ্রামবাসীদের দাবি, পুলিশ যদি আগে থেকে বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করত, তা হলে ওই ছাত্রীকে অকালে চলে যেতে হত না। অভিযোগ, বেআইনি ভাবে সড়ক দখল করে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও পুলিশ পদক্ষেপ করে না। পরে পুলিশ গিয়ে বাসিন্দাদের বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের মালিক মানিক আইচ বলেন, ‘‘পাথর ও বালি-বোঝাই ট্রাক এখানে এসে রাস্তার উপরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তা সরু হয়ে যায়।’’ রাস্তার উপরে দাঁড়িয়েই ট্রাক থেকে পাথর ওঠানো-নামানোর কাজ হয় বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। ব্যবসা চলে রাস্তার পাশ থেকেই। স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পের সামনেও ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় নকপুল এলাকার বাসিন্দা মৌসুমী এ দিন সকালে সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল। রামকৃষ্ণ পাঠাগারের কাছে রাস্তার পাশে একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় জল-কাদাও ছিল। পিছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৌসুমীকে ধাক্কা মারলে সে রাস্তায় ছিটকে পড়ে। ট্রাকের পিছনের চাকা মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় মেয়েটি।
মৌসুমীর স্কুলের কয়েকজন ছাত্রী বলে, ‘‘আমরা কেউ সাইকেলে, কেউ হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করি। সড়কের পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক সময়ে আমাদের ঘা ঘেঁষে অন্য যানবাহন দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়। ওই রাস্তা ধরে যেতে ভয় করে।’’
মৌসুমীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাবা শিবু দাস ও মা পলি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শিবুবাবুর দুই মেয়ে, এক ছেলে। মৌসুমী বড়। শিবুবাবু রং মিস্ত্রির কাজ করেন। বললেন, ‘‘কষ্ট করে খেলাপড়া শেখাচ্ছিলাম। সব শেষ হয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy