বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ মাপছে এক ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র
সকালবেলা স্কুলে ঢুকে পড়ুয়ারা জানতে পারছে, সেদিনের আবহাওয়ার গতিবিধি। জানছে, বায়ুর চাপ, তাপমাত্রা, বাতাসের গতি। সৌজন্য, স্কুলেই তৈরি হওয়া গবেষণাগার ও আবহাওয়া স্টেশন। বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে এই তথ্য সকলের সামনে তুলে ধরছে হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়া।
স্কুল সূত্রের খবর, ‘দ্য ক্লাইমেট থিঙ্কার’ নামে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ও স্কুলের যৌথ প্রচেষ্টায় এই পদক্ষেপ। সংগঠনের অন্যতম সদস্য সুইজারল্যান্ডে কর্মরত বাঙালি বিজ্ঞানী অরিন্দম রায় ও ডাক্তার সন্দীপশঙ্কর ঘোষের পরিকল্পনায় স্কুলে গড়ে উঠেছে আবহাওয়া স্টেশনটি। তাঁরা গবেষণাগারের জন্য নিজেরা বিভিন্ন যন্ত্রও তৈরি করেছেন। পড়ুয়াদের হাতেকলমে শিখিয়েছেন, কী ভাবে যন্ত্রের সাহায্যে জল, মাটি, বাতাসে থাকা বিভিন্ন উপাদানের পরিমাপ করতে হয়। শেখানো হয়েছে বায়ুর তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুর গতিবেগ, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি পরিমাপ করার কৌশল।
স্কুলে বসানো হয়েছে বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্র ব্যারোমিটার। আনা হয়েছে রেন গেজ (বৃষ্টিপাতের পরিমাণ), হাইগ্রোমিটার (বায়ুর আর্দ্রতা), টিডিএস বা টোটাল ডিসলভড সলিড (জলে মিশ্রিত কঠিন পদার্থের পরিমাণ), পিএইচ মিটার (তরলের অম্ল/ক্ষার পরিমাপক)-সহ নানা যন্ত্র। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির নির্বাচিত প্রায় ৫০ জন পড়ুয়াকে চারটি দলে ভাগ করে নমুনা সংগ্রহ, যন্ত্রের ব্যবহার, তখ্য সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দলগুলির নেতৃত্বে রয়েছেন একজন করে শিক্ষক।
ছাত্রছাত্রীরা সান্ডেলেরবিল, রূপমারি ও দুলদুলি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা রকম নমুনা সংগ্রহ করছে। স্কুলে এনে পরীক্ষা করে দেখছে কোথায় বায়ুদূষণের মাত্রা কতটা, জলে লবণের মাত্রার পরিমাণ, মাটির উর্বরতা ইত্যাদি। সপ্তাহে একদিন স্কুলে অনলাইনে অরিন্দম ও সন্দীপশঙ্কর পড়ুয়াদের সংগৃহীত তথ্যের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বোঝাচ্ছেন আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব ও তার বিভিন্ন দিক।
অরিন্দম জানান, সহজ পদ্ধতিতে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের। তারা রীতিমতো ভাল কাজও করেছে। আগামী ছ’মাসের তথ্য একত্রিত হলে তার ভিত্তিতে চাষের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে বলে আশা তাঁর। তবে প্রয়োজনে পড়ুয়াদের তুলে আনা এই তথ্য নির্ভুল কি না তা দেখা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘এক বছর এই প্রক্রিয়ায় কাজ চলবে। তারপরে আরও উন্নতমানের গবেষণার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, পূর্ব ভারতের কোনও স্কুলে এই উদ্যোগের নজির নেই।
স্কুলের খুদে বিজ্ঞানী দলের সদস্য অষ্টম শ্রেণির রিম্পা খাতুন, নবম শ্রেণির সঙ্গীতা মণ্ডলেরা বলে, ‘‘যা বইতে পড়ি তা হাতেকলমে শিখছি। খুব ভাল লাগছে।’’ প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা শুধু তথ্য সংগ্রহ করছে তা নয়, তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞেরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন দিক। ফলে পড়ুয়ারা আগামী দিনে তথ্য দেখেই বুঝতে পারবে পরিবেশ বা আবহাওয়ার পরিস্থিতি।’’
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘অসাধারণ উদ্যোগ। পড়ুয়ারা দক্ষ হয়ে উঠলে ওদের থেকে ব্লকের স্থানীয় পরিবেশ ও আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy