সপ্তাহান্তে দোল। টানা তিন দিন ছুটি। প্রকৃতি, পরিবেশ সব মিলিয়ে এই সময়টা সুন্দরবন ভ্রমণ বেশ আরামদায়ক। আর সুন্দরবন মানেই ব্যাঘ্র প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে বনভ্রমণে আর চড়া দামে টিকিট কাটা বা কোনও কর দেওয়ার বালাই নেই। আগাম পরিকল্পনা করেও সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখতে যাওয়া হচ্ছে না বহু পর্যটকের। তার কারণ, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যার জলযান জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি পায়। অভিযোগ, জলযান ভাড়া দেওয়া কিছু ‘সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী’ টানা ছুটি বা বিশেষ দিনে ছুটির এই ‘প্রাইম টাইম’গুলিতে নিজেদের জলযানগুলি প্রবেশের অনুমতি আগাম করিয়ে রেখেছেন, এ জন্য কোনও টাকা না লাগায়।
প্রতি বছরই বসন্ত উৎসবে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। চলতি বছরে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সুন্দরবনের জঙ্গলে প্রবেশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম পরিমার্জন করেছে। কার্যক্ষমতা ও দূষণের মাত্রা অনুযায়ী প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ জলযান প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অনলাইনে সেই অনুমতি নিতে হয়। একমাত্র আগাম অনুমতি নেওয়া জলযানগুলিই পর্যটকদের নিয়ে জঙ্গলে ভ্রমণের সুযোগ পাবে বলে জানানো হয়েছে। কিছু দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে রাজ্যের সমস্ত জঙ্গলে পর্যটকদের প্রবেশের মূল্য মুকুবের কথা ঘোষণা করেন। সেই থেকে সুন্দরবন ভ্রমণেও পর্যটকদের প্রবেশ মূল্য, জলযানগুলির প্রবেশ মূল্য সবই মুকুব করে দেওয়া হয়।
ট্যুর অপারেটরদের একাংশের অভিযোগ, যেহেতু জলযান প্রবেশের অনুমতি নিতে এখন আর টাকা লাগছে না, সেই সুযোগে নিজেদের লঞ্চ, ভুটভুটির নাম বন দফতরের ওয়েবসাইটে ঢুকে নথিভুক্ত করে রাখছেন জলযান মালিকদের কয়েক জন।
ফলে দিন পিছু জলযানের সংখ্যা পূরণ হয়ে গেলেই আর কেউ জঙ্গলে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না। এরপরে ‘বেশি টাকা’ দাবি করে ট্যুর অপারেটরদের ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ওই জলযানগুলি। অস্বাভাবিক টাকা চাওয়ায় সাত-দশ দিন আগে পরিকল্পনা করেও ১৩ থেকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করছেন বহু পর্যটক।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী নিউটন সরকার, গোবিন্দ দাসেরা বলেন, “এখন হঠাৎ করে এলে বা এক-দু’সপ্তাহ আগেও পর্যটকরাে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য বুক করতে চাইলে তাঁদেরকে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, সপ্তাহান্তের দিনগুলি, বিশেষ ছুটির দিনগুলিতে কিছু জলযান মালিক আগে থেকেই নিজেদের লঞ্চ, ভুটভুটির নাম প্রবেশের তালিকায় তুলে রেখে দিচ্ছেন। এর কোনও সময়সীমাও নেই, ফলে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে পর্যটকদের।’’
‘সুন্দরবন পিপল ওয়াটার সোসাইটি’র সম্পাদক উপানন্দ বৈদ্য বলেন, ‘‘আখেরে পর্যটন ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। বিরক্ত হচ্ছেন পর্যটকেরা।’’ গদখালি বোট ইউনিয়নের সম্পাদক আমিরুল মিদ্দে বলেন, ‘‘দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “সুন্দরবনে দূষণ কমাতেই এক দিনে জঙ্গলে নির্দিষ্ট পরিমাণ নৌকোর বেশি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। ইচ্ছে করেই এই সঙ্কট তৈরি করছেন কিছু ব্যবসায়ী। ওঁদেরই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা করেও বাতিল করেছেন নীলাঞ্জন মজুমদার। তিনি বলেন, “আমরা ৫৬ জনের একটা দল মুর্শিদাবাদ থেকে দোলে সুন্দরবন আসব বলে ঠিক করেছিলাম। ট্যুর অপারেটররা লঞ্চ বুক করার সমস্যার কথা বলেছেন। ফলে এ বার দোলে সুন্দরবন ভ্রমণ হল না!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)