Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ফাঁকা হচ্ছে একের পর এক পদ, উদ্বেগে অভিভাবকেরা
Schools

Teachers: একাধিক স্কুলে বদলি বহু শিক্ষক

মথুরাপুর ১ রানাঘাট হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ২১ জন।

একাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন ভেটকিপুকুর হাইস্কুল থেকে।

একাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন ভেটকিপুকুর হাইস্কুল থেকে। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মথুরাপুর শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২২ ০৬:০৩
Share: Save:

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আগেই বদলি হয়ে গিয়েছেন। এ বার একে একে অনেক সহকারী শিক্ষকেরও বদলি হয়ে গিয়েছেন সেই সব স্কুলে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের পঠনপাঠন। বাধ্য হয়ে পার্শ্বশিক্ষকদের দিয়ে স্কুল চালাতে হচ্ছে। মথুরাপুর ১ ব্লকের অনেক হাইস্কুলেই তৈরি হয়েছে এই সমস্যা।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের ১৮টি হাইস্কুলের মধ্যে দশটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা উৎসশ্রী প্রকল্পে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের বদলির পরে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অন্য এক শিক্ষক। তিনি এতদিন ক্লাস নিতেন, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়ে স্কুলের প্রশাসনিক খুঁটিনাটি সামলাতে গিয়ে ক্লাসে যেতে পারছেন না।

আবার অন্য একটি স্কুলের ৫-৬টি বিষয়ের শিক্ষক বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলি হয়ে চলে যাওয়ায় শিক্ষকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে একাধিক স্কুলে।

ওই ব্লকের বুটিশ্বর এসবি হাইস্কুল, নারীশিক্ষা মন্দির হাইস্কুল, জনার্দনপুর হাইস্কুল, মথুরাপুর হাইস্কুল, সন্তোষনগর হাই মাদ্রাসা, গোয়ালবাড়িয়া হাইস্কুল, সীতানাথ হাইস্কুল, পাটকেলবেড়িয়া হাইস্কুল, রানাঘাট হাইস্কুল ও ভেটকিপুকুর হাইস্কুলে ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এই স্কুলগুলিতে আপাতত সহকারী কোনও এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্কুল পরিচালন কমিটির পক্ষ থেকে।

পরিচালন সমিতির সদস্যেরা স্কুলের শিক্ষকদের সম্মতি নিয়ে নির্বাচিত করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। এর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের কপি পাঠাতে হয় স্কুলের জেলা পরিদর্শকের কাছে। সেখান থেকেই সহকারী শিক্ষক থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনুমোদন মেলে। তবে প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে যাওয়ার পরে সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে সমস্যায় পড়ছেঅনেকে স্কুলই।

মথুরাপুর ১ রানাঘাট হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ২১ জন। মার্চ মাসে প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে যান। দায়িত্ব পেয়েছেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক সফিউদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষক আচমকা চলে যাওয়ায় প্রথম দিকে দায়িত্ব সামলাতে বেশ সমস্যাহচ্ছিল। ধীরে ধীরে স্বাভাবিককরার চেষ্টা করছি। আমি গণিত পড়াতাম। কিন্তু এই দায়িত্ব নেওয়ার পরে তা প্রায় বন্ধ।”

এই স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পড়ানোর জন্য দু’জন শিক্ষক থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি পড়ানোর শিক্ষক নেই। বাধ্য হয়ে ওঁরাই উচ্চ মাধ্যমিক সামলাচ্ছেন। গণিতের ক্ষেত্রেও একজন শিক্ষকই পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্তক্লাস নিচ্ছেন।

গত আট বছর ধরে এখানে কোনও শিক্ষাকর্মী নেই। স্কুলে করণিক ও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিভাগীয় দফতরে আবেদন করা হয়েছে।

ভেটকিপুকুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কয়েক মাস আগে বদলি হয়েছেন। এখন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক শুকদেব নস্কর। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে জানালেন, করণিক অসুস্থ। এ ছাড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ৪০০ ছাত্রছাত্রীর জন্য ১৯ জন শিক্ষক ছিলেন এক সময়ে। কিন্তু উৎসশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক-সহ ৬ জন সহকারী শিক্ষক বদলি হয়ে চলে গিয়েছেন।

শুকদেব বলেন, “আমি এক সময়ে গণিত ও ইংরেজি ক্লাস নিতাম। কিন্তু এখন আর ক্লাস নিতে পারি না। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। প্রধান শিক্ষক যে ভাবে সহকারী শিক্ষকদের নির্দেশ দিতেন, আমি সেটা পারি না। কোনও ভাবে অনুরোধ করে কাজ করাতে হচ্ছে।” পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে ইংরেজি, গণিত, ইতিহাস ও শিক্ষার বিষয়ে শিক্ষকের প্রয়োজন।

মথুরাপুরের বটিশ্বর এসবি বিদ্যাপীঠে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা-সহ সাতজন শিক্ষক রয়েছেন এই স্কুলে। গণিতের কোনও শিক্ষক নেই। পার্শ্বশিক্ষক দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুলেখা মণ্ডল জানালেন, শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠনে সমস্যা হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা। সমস্ত বিষয় শিক্ষা দফতরকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে করোনা জেরে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। ফলে ছেলেমেয়েদের গৃহশিক্ষক দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই বহু পরিবারে। স্কুলের পঠনপাঠনের উপরে নির্ভরশীল পড়ুয়াদের শিক্ষা।

ওই এলাকার পাথরঘাটা গ্রামের বাসিন্দা অভিভাবক স্বপন হালদার বলেন, “স্কুলের শিক্ষকদের উপরে আমরা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু তাঁরা বদলি হয়ে যাওয়ায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের উচিত, অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করে পঠন-পাঠনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।”

এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা স্কুল শিক্ষা দফতরের পরিদর্শক (হাইস্কুল) ব্রজেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “বদলি হয়ে যাওয়া প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের তালিকা শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Schools Teachers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE