Advertisement
E-Paper

এ বার প্রাণ গেল হাবড়ার কিশোরীর

বাসিন্দারা জানান, দেরিতে হলেও পুরসভা অবশ্য ডেঙ্গি মোকাবিলায় পদক্ষেপ করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৫
বে-হুঁশ: মালার (ইনসেটে) বাড়ির সামনে আগাছা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

বে-হুঁশ: মালার (ইনসেটে) বাড়ির সামনে আগাছা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে হাবড়ায়। এ বার জ্বরে ভুগে মৃত্যু হল অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর। শুক্রবার ভোরে বারাসত জেলা হাসপাতালে মালা বিশ্বাস (১৪) নামে ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।

পরিবারটি জানায়, বুধবার হাবড়া হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়ে। সে কথা মানছেন হাবড়া হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষও। বারাসত হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্যুর শংসাপত্রেও এনএস-১ পজিটিভের উল্লেখ আছে। জেলার বহু হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই জানালেন, অ্যালাইজা পরীক্ষায় এনএস-১ পজিটিভ এলে ডেঙ্গি ধরে নিয়েই চিকিৎসা হয়। কিন্তু তা হলে মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গির উল্লেখ নেই কেন? বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা গিয়েছিল। এই হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করার সুযোগ মেলেনি। তাই আগের রিপোর্টের ভিত্তিতে মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।’’

এ নিয়ে হাবড়া-অশোকনগর এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গিতে ১৯ জনের মৃত্যু হল। রোজই নতুন নতুন রোগী জ্বর নিয়ে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ৮৯ জন ডেঙ্গি-আক্রান্ত বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘বছর দু’য়েক আগে সরকার ডেঙ্গির রিপোর্ট চেপে যেতে চেয়ে বিপদ বাড়িয়েছিল। এ বারও সেই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, আগে থেকে যদি

ঠিক মতো ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তা হলে এই পরিস্থিতি তৈরিই হত না।

যদিও হাবড়া পুরসভায় ডেঙ্গির প্রকোপ কমেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি এ দিন হাবড়া হাসপাতালে আসেন। সুপারের সঙ্গে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘হাবড়া পুরসভায় প্রশাসক থাকা সত্ত্বেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় ভাল কাজ হয়েছে। পুর এলাকার ১৭ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী এখন হাসপাতালে ভর্তি।’’

হাটথুবায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত মালারা। মঙ্গলবার জ্বর আসে মেয়েটির। সন্ধ্যায় তাকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার রক্ত পরীক্ষায় এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার তাকে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই শুক্রবার মারা যায় ওই কিশোরী।

তিন ভাই বোনের মধ্যে মালা ছোট। হাবড়ার কামারথুবা নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ত সে। বাবা বিজয় রং মিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মালার দিদি পূজা বলেন, ‘‘বোনের মৃত্যুর পরে এলাকায় পুরসভার তরফে সাফাই অভিযান শুরু হয়েছে। আগে এ সব হলে হয় তো আমার বোনকে এ ভাবে হারাতে হত না।’’

বাসিন্দারা জানান, দেরিতে হলেও পুরসভা অবশ্য ডেঙ্গি মোকাবিলায় পদক্ষেপ করেছে। মশা মারার তেল, ব্লিচিং, চুন ছড়ানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ধোঁয়া। বন-জঙ্গল সাফাই চলছে। নিকাশি নালা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে নিয়মিত। নালায় জল দাঁড়াচ্ছে না। ডেঙ্গি মশার লার্ভা শনাক্ত করতে ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে সাধারণ মানুষ এখনও পুরোপুরি সচেতন হননি বলে অভিযোগ। প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার কমলেও তা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। থার্মোকলের ব্যবহারও চলছে। অনেক বাড়িতে জল জমে আছে। বাড়ির আশপাশে ডাবের খোলা, মাটির ভাঁড়, চায়ের কাপ পড়ে থাকতে দেখা গেল। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মানুষকে সচেতন করতে আরও বেশি করে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।

Dengue Munucipality Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy