Advertisement
E-Paper

সহায় ডিএম, চিকিৎসা শুরু হল কিশোরের

নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্স করে বারাসত জেলা হাসপাতালে এনে সিসিইউ-তে রেখে শুভদীপ রজক ১৬ বছরের ওই কিশোরের চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকেরা।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৫

একাদশ শ্রেণির ছাত্রটির দু’টো কিডনিই অকেজো হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ভেলোরের চিকিৎসকেরা। কলকাতার সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে ছেলেকে বাঁচাতে ভিটেমাটি বেচে বারাসতের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করে আকুল পাথারে পড়েছিলেন বাবা। সেই খবর কানে যায় উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শাসকের। তিনি হস্তক্ষেপ করায় অবশেষে ব্যবস্থা হয় সেই কিশোরের চিকিৎসার।

নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্স করে বারাসত জেলা হাসপাতালে এনে সিসিইউ-তে রেখে শুভদীপ রজক ১৬ বছরের ওই কিশোরের চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকেরা। সোমবার তার ডায়ালিসিসও করা হয়। ওই কিশোরের অবস্থা দেখে একটি কিডনি দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন ওই হাসপাতালেরই অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রবীন বসাক। তিনি বলেন, ‘‘আমার ৬২ বছর বয়স। একটি কিডনি দিয়ে বাচ্চা ছেলেটাকে যদি বাঁচানো সেই আশাতেই আবেদন করেছি।’’ এর আগেই অবশ্য ওই কিশোরের মা রিনা রজন নিজের একটি কিডনি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে প্রতিস্থাপন করা হবে একটি মাত্র কিডনি। এই কিশোরের ক্ষেত্রে দুই ইচ্ছুক দাতার আবেদনই বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে।

কিডনি দেওয়ার বিষয়ে অবশ্য সরকারের নিয়ম আছে। রাজ্যে অঙ্গদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার অদিতিকিশোর সরকার বলেন, ‘‘দাতা রোগীর আত্মীয় না হলে কিংবা এ রাজ্যের বাসিন্দা না হলে স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন জানাতে হয়। স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠক করে অনুমতি দেওয়া হয়। অন্য ক্ষেত্রে হাসপাতালে আবেদন করলেও হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে ওই দু’জনের রক্ত পরীক্ষা হবে। প্রয়োজনীয় সব কিছু মিলে গেলে কিডনি প্রতিস্থাপনে অসুবিধা নেই।’’ তখন ঠিক হবে, কার কিডনি দেওয়া হবে ওই কিশোরকে।

পরিবার সূত্রে খবর, শুভদীপ মধ্যমগ্রামের গুস্তিয়া হাইস্কুলের ছাত্র। গত জানুয়ারি মাস থেকে হঠাৎই প্রচণ্ড পেট ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে ছেলেটি। স্থানীয় চিকিৎসকেরা রোগ ধরতে পারছিলেন না। দমদমে একটি লন্ড্রিতে কাজ করে কিছু দিন আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বাবা রামপিরিত রজক। এলাকার মানুষের কথা শুনে নিজেদের এক চিলতে ঘরটি বিক্রি করে শুভদীপকে নিয়ে তিনি চলে যান দক্ষিণ ভারতে। ভেলোরের চিকিৎসকেরা জানান শুভদীপের দু’টি কিডনিই অকেজো হয়ে গিয়েছে।

তবে সেখানে বেশি দূর চিকিৎসা করাতে পারেননি রামপিরিত। এ দিকে রাজ্যে ফিরে আসার পরে শুভদীপের শরীর ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। শয্যা নেই বলে বারবার ফিরিয়ে দেয় এসএসকেএম। রামপিরিতের কথায়, ‘‘সাত আট মাস ধরে ছেলেটাকে নিয়ে দৌড়োচ্ছি। কাজেও যেতে পারছিলাম না। সুদে টাকা ধার করে, কুপন ছাপিয়ে, এর-ওর সাহায্য নিয়ে বারাসতের নার্সিংহোমে ভর্তি করি।’’ কিন্তু সেও তো অনেক খরচ।

লোকমুখে শুভদীপ ও তার পরিবারের দুর্দশার কথা জানতে পারেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বারাসত জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ছেলেটি ও তার পরিবারকে বাঁচাতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে ওকে নিয়ে আসি। ডায়ালিসিসের পরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে।’’ শুভদীপের মা রিনাদেবী বলেন, ‘‘দেবদূতের মতো ওঁরা সকলে চলে এলেন। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমার!’’ এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে অন্তরা আচার্য শুধু বলেন, ‘‘এটাই তো আমাদের কাজ।’’

treatment Teenager Barasat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy