সারা রাজ্যের মধ্যে কাকদ্বীপ আদালতকেই প্রথম মডেল আদালত হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনের এক মাস পেরোতে না পেরোতেই ঝাঁ চকচকে আদালত বাড়ির ভেতরে উকি মারতে শুরু করেছে নানা অব্যবস্থা, পরিকাঠামোগত ত্রুটি। ল’ক্লার্কদের বসার জায়গার অভাব। লিফ্ট খারাপ। অনেক শৌচাগারে ঠিকমতো জলও আসছে না।
১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টের জোনাল বিচারপতি এবং রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য উদ্বোধন করেন আদালত। আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই মডেল আদালত হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে কাকদ্বীপ আদালত চত্ত্বরটিকে।’’ কিন্তু মডেল আদালতের পরিকল্পনা হলেও এখনও কিছু ঘাটতি থেকেই গিয়েছে। আদালতের ল’ক্লার্কদের বাধ্য হয়ে বসতে হচ্ছে গ্যারেজের শেডে। কিছু আইনজীবী বসছেন ওয়েটিং লাউঞ্জে। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে।
ল’ক্লার্ক ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার নেতা বিশ্বনাথ দলুইয়ের কথায়, ‘‘খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে আমাদের। অনেকে খোলা আকাশের নীচেও বসছেন। উপরে উঠতে হচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে, কারণ একটি লিফট খারাপ হয়ে রয়েছে।’’ লিফট চালানোর লোক নেই। তাই অনেকে মিলে লিফটে উঠে পড়ছিল। অতিরিক্ত ওজন সইতে না পেরে লিফটটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। আদালতের দক্ষিণ দিকে শৌচাগারের জল পড়ে উঠোন ভেসে যাচ্ছে। তার মধ্যে দিয়েই লোককে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
অল ইন্ডিয়া ল’ক্লার্ক ফেডারেশনের সম্পাদক বিশ্বনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি বিচারকদের জানিয়েছি, তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, আপাতত কাজ চালাতে, তারপর বিচারকদের আবাসন আর কোর্টের মাঝখানের জলা বুজিয়ে সেরেস্তা তৈরি হওয়ার কথা।’’ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলছে, একটি আদালতের মধ্যে পাওয়া সমস্ত রকমের পরিষেবা এক ছাদের তলায়, অর্থাৎ, একটিই বাড়ির মধ্যে থাকবে। সেটাই হবে মডেল কোর্ট।
বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আরও কিছু সমস্যার কথা বলছেন। সংগঠনের সম্পাদক সুব্রতকুমার গিরি বলেন, ‘‘আমরা প্রয়োজনে জেলা বিচারককে জানাব, জল আসছে না। অপরিচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে শৌচাগারগুলি। সবচেয়ে বড় কথা, আদালতের সঙ্গেই লাগানো জাতীয় সড়কে জেব্রা ক্রসিং বা পুলিশি নজরদারি নেই। বেআইনি পার্কিং হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই দু’টি দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’’ যে সমস্ত উকিলবাবুদের ওয়েটিং লাউঞ্জে বসতে হচ্ছে, নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তাদের মধ্যেও। আইনজীবী দুলাল দলুই বলেন, ‘‘গেটগুলি খোলামেলা, তারপরেই আমাদের এই লাউঞ্জ। সিসিটিভি নেই। পুলিশি নজরদারি নেই।’’
পুলিশ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, আদালতে মহিলা কনস্টেবল সহ পুলিশের একটি বড় দল রয়েছে। তারাই নিরাপত্তার বিষয় দেখেন। তবে বিশেষ কোনও ব্যাপার, যেমন কোনও বিক্ষোভ, বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এলে আলাদা করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে আদালত চত্ত্বরের পুলিশকর্মীরা অভিযুক্তদের সামলানো, তাদের কোর্ট লকআপ থেকে বের করে এজলাসে তোলা ছাড়াও অন্যান্য কিছু কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাই তাদের আলাদা করে নিরাপত্তা দেখা প্রায় অসম্ভব।
আদালতের মুখে জাতীয় সড়ক বরাবর জেব্রা ক্রসিং, এবং আদালতের ঠিক বাইরে দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশের পাহারার ব্যাপারে অবশ্য পুলিশ সে রকম কিছু আশ্বাস দিতে পারেনি। তবে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বেআইনি পার্কিং আটকাতে আদালতের দেওয়াল বরাবর গার্ডরেল দেওয়া রয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের টহলদারি বাড়ানোর পদক্ষেপ করা হবে।’’ আদালতের পরিকাঠামো নিয়ে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাম চন্দ বলেন, ‘‘আমরা এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই যে সব খামতি আমাদের দায়িত্বে পড়ে সেগুলি সারিয়ে দেওয়া হবে।’’
ধর্ষণের অভিযোগ বাসন্তীতে। এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে বাসন্তীর ৬ নম্বর ভরতগড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, বছর পনেরোর ওই নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। মহানন্দ মণ্ডল নামে ওই অভিযুক্ত যুবক পলাতক। তার খোঁজ চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রের খবর, গত দিন দশেক আগে বাংলাদেশ থেকে মহানন্দ মণ্ডল নামে এক যুবক বাসন্তীর ভরতগড় গ্রামের মাসির বাড়িতে বেড়াতে আসে। সেখানেই ওই নাবালিকার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এদিন সন্ধ্যায় যখন ওই নাবালিকা তার ঘরে পড়াশোনা করছিল তখন ওই যুবক ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। সেই সময় ওই নাবালিকার মা-বাবা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। মা বাড়িতে ফিরলে ওই নাবালিকা সব কথা বলে। মঙ্গলবার সকালে বাসন্তী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তার মা। পুলিশ ওই নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ওই ঘটনার পরে অভিযুক্ত বাংলাদেশে পালিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy