E-Paper

শীর্ষ নেতৃত্ব না কি প্রভাবশালী নেতা, পুরপ্রধান বাছবেন কে?

শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিদের মধ্যে দু’টি পক্ষ তৈরি হয়েছে বলে খবর। একটি পক্ষ মনে করছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। আর একটি পক্ষ অবশ্য স্থানীয় প্রভাবশালীর উপরেই আস্থা রাখছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:২৯
পানিহাটি পুরসভা।

পানিহাটি পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

নতুন পুরপ্রধান কে হবেন? এই প্রশ্নে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, না কি স্থানীয় কোনও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে, তা নিয়ে জোরদার জল্পনা শুরু হয়েছে পানিহাটিতে। আর এ বিষয়ে শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিদের মধ্যে দু’টি পক্ষ তৈরি হয়েছে বলে খবর। একটি পক্ষ মনে করছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। আর একটি পক্ষ অবশ্য স্থানীয় প্রভাবশালীর উপরেই আস্থা রাখছে।

সূত্রের খবর, মলয় রায়ের পদত্যাগের পরে পরবর্তী পুরপ্রধান কে হবেন, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই তা ঠিক করে রেখেছেন। আগামী ২১ মার্চ উপ-পুরপ্রধান সুভাষ চক্রবর্তী বোর্ড অব কাউন্সিলর্সের বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে দলের তরফে কোনও এক জন প্রতিনিধি মুখবন্ধ খামে ভরে নিয়ে আসবেন নতুন পুরপ্রধানের নাম। সেটি পুর বোর্ডের বৈঠকে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সোমবার বোর্ড অব কাউন্সিলর্সের বৈঠকে পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পরে মলয় বার্তা দিয়েছিলেন, ‘খেলা শেষ হয়নি।’ অমরাবতী মাঠ প্রসঙ্গে হলেও বিদায়ী পুরপ্রধানের ওই বার্তার মধ্যে প্রচ্ছন্ন ভাবে নতুন সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত রয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সেই অনুমান যে একেবারে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে সোমবার রাত থেকেই। পানিহাটি জুড়ে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, নতুন পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে। প্রশ্ন হল, শাসকদলের অন্দরের একাংশের কথা অনুযায়ী, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি ইতিমধ্যেই নতুন পুরপ্রধানের নাম ঠিক করে থাকেন, তা হলে সেখানে স্থানীয় কারও ইচ্ছা-অনিচ্ছা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আর যদি তা-ই হয়, তা হলে কি পরোক্ষ ভাবে আবারও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা হবে না?

এমতাবস্থায় কটাক্ষ করছেন বিরোধীরাও। তাঁদের কথায়, ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অমান্য করার ক্ষমতা তৃণমূলেই পাওয়া সম্ভব। তাই বিভিন্ন পক্ষ, নতুন সমীকরণের প্রসঙ্গ আসছে়।’’ সোমবার পানিহাটি প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক নির্মল ঘোষের ভূমিকা নিয়ে বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ দাবি করেছিলেন, পানিহাটির পুরপ্রতিনিধি অনুপম দত্তকে খুনের ঘটনায় বিধায়কের জামাইকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। তাই পুরপ্রধান বদলের বিষয়ে বিদ্রোহ না করে চুপ করে আছেন নির্মল। নির্মল সে দিন অর্জুনের এই বক্তব্যকে ‘অর্থহীন’ বলে দাবি করলেও মঙ্গলবার তা নিয়ে সরব হয়েছেন অনুপমের স্ত্রী মীনাক্ষী দত্ত। পানিহাটির পুরপ্রতিনিধি মীনাক্ষী এ দিন বলেন, ‘‘আমার স্বামীর খুনের বিষয়ে অর্জুন যা জানেন, তা তিনি পুলিশ-প্রশাসনকে জানান। না-হলে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেই সূত্রে প্রশাসন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক।’’ জানা যাচ্ছে, অনুপমকে খুনে মূল অভিযুক্ত বাপি পণ্ডিত ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।

নতুন পুরপ্রধান প্রসঙ্গে পানিহাটিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত স্পষ্ট। সূত্রের খবর, শুক্রবার নতুন পুরপ্রধানের নাম ঘোষণার আগে মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করার জন্য একটি চিঠিতে এ দিন কয়েক জন পুরপ্রতিনিধিকে সই করানো হয়েছে। যা পুরমন্ত্রীর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু ‘শেষ চেষ্টা’র এই চিঠির নেপথ্যে কে বা কারা?

চিঠির বিষয়টি স্বীকার করে উপ-পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আজ দু’জন কাউন্সিলর সই করাতে এসেছিলেন। কিন্তু আমি সই করিনি। দলনেত্রী ও শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরপ্রধান হিসাবে যে নাম পাঠাবেন, সেটাই শিরোধার্য। সেখানে এমন চিঠির কোনও প্রশ্নই থাকতে পারে না।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে কয়েক জন পুরপ্রতিনিধি অবশ্য দাবি করেছেন, চিঠির বয়ান পুরো পড়ার সুযোগ না দিয়েই কার্যত ‘চাপ’ দিয়ে সই করানো হয়। সূত্রের আরও খবর, এ দিন পানিহাটির কয়েক জন মহিলা ও পুরুষ পুরপ্রতিনিধি বিধানসভায় যান। যাওয়ার কারণ স্পষ্ট নয়।

তবে, পুরপ্রধানের চেয়ারে কে বসবেন, তাতে দল না প্রভাবশালী ব্যক্তির মতামত প্রাধান্য পাবে, সেটাই এখন দেখার!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panihati TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy