Advertisement
০২ মে ২০২৪
Bridge Construction

আগাছায় ঢেকেছে শিলান্যাসের ফলক, সেতুর দাবি অধরাই

গ্রামের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে সাঁকোটির পরিবর্তে পাকা কংক্রিটের সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত-সহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন তাঁরা।

An image of the bridge

জীর্ণ: ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র  
বাগদা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৩৯
Share: Save:

কাঠের সাঁকোর জায়গায় কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। বার কয়েক শিলান্যাস হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলেই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। বাগদার সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের রাঘবপুর এলাকার ঘটনা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বাওড়ের উপরে নড়বড়ে একটি কাঠের সাঁকোই গ্রামের মানুষের যাতায়াতের মূল পথ। বিপদের ঝুঁকি থাকায় গ্রামের চাষিরা খেতের আনাজ ওই সাঁকো দিয়ে হাটে-বাজারে নিয়ে যেতে পারেন না। আশঙ্কাজনক রোগীদেরও ওই সাঁকোয় তোলা হয় না। কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে চাষিরা হাটে বাজারে আনাজ নিয়ে যান। রোগীদেরও ঘুরপথে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। নড়বড়ে সেতু ভেঙে পড়ে গিয়ে কয়েক বার দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে জানান গ্রামবাসীরা। অনেকে আহত হয়েছেন।

গ্রামের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে সাঁকোটির পরিবর্তে পাকা কংক্রিটের সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত-সহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন তাঁরা। একাধিকবার স্থানীয় হেলেঞ্চা-দত্তপুলিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। কিন্তু অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি। গ্রামবাসীরা জানান, যে কোনও ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে নিয়ম করে পাকা সেতুর আশ্বাস দেওয়া হয়। এক বার ভোট পর্ব মিটে গেলে কেউ আর কথা রাখে না।

পাকা সেতু তৈরি করা হবে বলে বার কয়েক ঘটা করে শিলান্যাসও হয়েছিল। কিন্তু শিলাগুলিই কেবল পড়ে আছে। সেতু আর হয়নি। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, দু’টি শিলা ও একটি সাইনবোর্ড লাগানো আছে বাওড়ের পাড়ে। সেগুলি আগাছায় ঢেকে গিয়েছে। ২০১১ সালে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়ে জয়ী হয়েছিলেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। তিনি বিধায়ক থাকার সময়ে এক বার পাকা সেতুর শিলান্যাস করা হয়েছিল। সেই ফলক এখনও আছে। কিছু শব্দ উঠে গিয়েছে। তবু পড়া যায়, ‘উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের বিধায়ক তহবিল এবং অর্থ কমিশনের টাকায় সেতুটি তৈরি হবে। জেলা পরিষদ তত্বাবধানে থাকবে।’ একটি পুরনো সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘কাজের জায়গার মাটি খারাপ থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে জেলা পরিষদ পরামর্শদাতা নিয়োগ করে ডিপিআর প্রস্তুত করে। কিন্তু সেচ দফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আরও একটি ডিপিআর প্রস্তুত করার কাজ চলছে।’ এই সাইন বোর্ডটি কবে লাগানো হয়েছিল, তার অবশ্য উল্লেখ নেই। দেখা গেল, ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা পড়ে রয়েছে আরও একটি ফলক।

স্থানীয় রাঘবপুর, সিন্দ্রাণী, হরিনগর, আকন্দতলা, কুঠিবাড়ি, হুলোরঘাট, কমলাবাস-সহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষ সাঁকোটি ব্যবহার করেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৬ সাল নাগাদ বাঁশের সাঁকোটি তৈরি হয়। তার আগে মানুষ নৌকোয় পারাপার করতেন। সাঁকোয় আগে ভ্যান, ছোট গাড়ি চলাচল করলেও বিপদের ঝুঁকি থাকায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বিনয় বিশ্বাস বলেন, “আমাদের যাতায়াতের মূল রাস্তা ওই নড়বড়ে সেতু। রোজ ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। রোগীদের গাড়ি করে সাঁকো দিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। চাষিরা দত্তপুলিয়া হাটে আনাজ নিয়ে যেতে পারেন না। আমাদের সময় ও পরিবহণ খরচ বেড়ে গিয়েছে।”

সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রধান সৌমেন ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রতি বছর নতুন বাঁশ পুঁতে সাঁকোটি মেরামত করে দেওয়া হয়। এ বার প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে মেরামত করা হয়েছে। পাকা সেতুর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায় বলেন, “সাঁকো পাকা করার মতো অর্থ পঞ্চায়েত সমিতির হাতে থাকে না। তবে আমরা মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।” বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, “পাকা সেতুর বিষয়টি সেচমন্ত্রীকে জানাব। সেতু তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

construction Bridge Bagda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE