E-Paper

বরাহনগরের ব্যবসায়ী খুনে হাজারো ধোঁয়াশা, লুট ১৫ কেজি সোনা!

রবিবার দুপুরে বরাহনগরের শম্ভুনাথ দাস লেনে গিয়ে দেখা গেল, সমস্ত সোনার দোকান ওকারখানা বন্ধ। শঙ্করের দোকানের সামনে পুলিশ পিকেট রয়েছে। দোকান থেকে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে ৫০ মিটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২২
১৫ কেজি সোনা লুট হলেও আরও বেশ কয়েক কেজি সোনা দোকানেই ছিল। সেগুলি এবং নগদ কয়েক লক্ষ টাকা দোকানেথাকলেও তা অবশ্য নেয়নি দুষ্কৃতীরা।

১৫ কেজি সোনা লুট হলেও আরও বেশ কয়েক কেজি সোনা দোকানেই ছিল। সেগুলি এবং নগদ কয়েক লক্ষ টাকা দোকানেথাকলেও তা অবশ্য নেয়নি দুষ্কৃতীরা। —প্রতীকী চিত্র।

বাইরে জুতো খুলে দোকানে ঢোকা পছন্দ করতেন।বরাহনগরের সোনার দোকানে প্রথমে ক্রেতা সেজে ঢোকা দুষ্কৃতীরাও তেমনটাই করেছিল। খুন হওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ী শঙ্কর জানার এই পছন্দের কথা কী ভাবে জানতে পারলতারা? শনিবার দুপুরে বরাহনগরের সোনার দোকানে খুন ও ডাকাতির ঘটনায় তবে কি স্থানীয় কেউ গোপনে তথ্য সরবরাহের কাজ করেছে? সেটা খতিয়ে দেখছেনতদন্তকারীরা। দোকান মালিককে খুনের পরে প্রায় ১৫ কেজি সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছেদুষ্কৃতীরা। যার মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা!

রবিবার দুপুরে বরাহনগরের শম্ভুনাথ দাস লেনে গিয়ে দেখা গেল, সমস্ত সোনার দোকান ওকারখানা বন্ধ। শঙ্করের দোকানের সামনে পুলিশ পিকেট রয়েছে। দোকান থেকে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে ৫০ মিটার।গোটা এলাকায় বহুতলের নীচে সোনার গয়নার দোকানও কারখানা রয়েছে। ফলে এলাকার প্রায় সর্বত্রই সিসি ক্যামেরারয়েছে।

সূত্রের খবর, শনিবার দুপুর ৩টে ৫ মিনিট নাগাদ প্রথমে দুইদুষ্কৃতী ক্রেতা সেজে শঙ্করের দোকানে আসে। কয়েক মিনিট পরে আরও তিন জন আসে। তাদের এক জন দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। মিনিট কুড়ির মধ্যে পুরো ‘অপারেশন’শেষ করে দুষ্কৃতীরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে হেঁটে চলে গিয়েছিল। তিন জন দোকান থেকে বেরিয়ে ডান দিকে শঙ্করের বাড়ির উল্টো দিকের তস্যগলি দিয়ে এবং বাকি দু’জন বাঁ দিকের রাস্তা ধরে চলে যায়।স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ওই দুই পথেই মিনিট ১৫ হাঁটলে দমদম স্টেশনেরদিকে যাওয়া যায়। যদিও সেখান থেকে দুষ্কৃতীরা ট্রেনে উঠেছিল কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রশ্ন উঠছে,এলাকার গলির রাস্তা কী ভাবে চিনল দুষ্কৃতীরা?

ঘটনার আগে এসে স্থানীয় কারও মাধ্যমে রেকি করা হয়েছিল কিনা, সেটাও দেখছেনতদন্তকারীরা। পাশাপাশি দমদমের দিক থেকে ওই দুষ্কৃতীরা কোন পথে এবং কী ভাবে চম্পট দিয়েছে, সেই বিষয়ে দিশা পেতে বিভিন্ন বড় রাস্তা,টোল প্লাজ়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পুলিশ পরীক্ষা করছে বলে খবর। পুলিশের অনুমান, পড়শিরাজ্য থেকে আসা ১৭ থেকে ২২ বছর বয়সের ওই দুষ্কৃতীরা খুবই পেশাদার। কারণ, মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে দোকানের ভিতরেরআলো বন্ধ করে খুন ও লুটপাট চালিয়ে তারা চম্পট দিয়েছে।

এত বড় ‘অপারেশন’ করতে এলেও কেউ নিজেদের সঙ্গে কোনও অস্ত্র আনেনি। কেন?কারণ শঙ্করকে হাত-পা বেঁধে সোনা কাটিংয়ের যন্ত্র দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছিল। এইসমস্ত দিকের পাশাপাশি ওই ঘটনার সঙ্গে সোনা ডাকাতিতে কুখ্যাত দুষ্কৃতী জেলবন্দি বিহারের সুবোধ সিংহের দলের যোগআছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

প্রতিদিনই এলাকার অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দুপুরে বাড়ি চলে যেতেন। তেমনই শঙ্করও দুপুরআড়াইটের মধ্যে দোকান বন্ধ করে খাওয়াদাওয়া করতে বাড়ি যেতেন। কিন্তু শনিবার তিনটে বেজে গেলেও তিনি দোকানে ছিলেন। ক্রেতা আসার কোনও আগাম খবর তাঁর কাছে ছিল কিনা, সেটাওজানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তবে শঙ্করের মোবাইলটি দোকান থেকে পাওয়া যায়নি। বছর পাঁচেক ধরে বাবার সঙ্গে ব্যবসা করলেও দুর্গাপুজোর সময়ে দিল্লি যেতেন শঙ্করের ছেলে শান্তনু। ফলে একাই দোকান সামলাচ্ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ নিশ্চিত, সেই খবরও দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল।

ঘটনার খবর পেয়ে শনিবার রাতেই দিল্লি থেকে ফিরেছেন শান্তনু। আগামী ডিসেম্বরে তাঁর বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। এ দিনপরিজনদের নিয়ে দোকানে ঢুকে ছিলেন পুলিশকর্মীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ১৫ কেজি সোনা লুট হলেও আরও বেশ কয়েক কেজি সোনা দোকানেই ছিল। সেগুলি এবং নগদ কয়েক লক্ষ টাকা দোকানেথাকলেও তা অবশ্য নেয়নি দুষ্কৃতীরা। জানা যাচ্ছে, এখনকার দোকানের পাশেই আর একটি দোকান রয়েছে শঙ্করের। সেখানে গয়না তৈরি হত। কিন্তু বছর পাঁচেকআগে গয়না তৈরি বন্ধ করে পাইকারি ও খুচরো বিক্রির নতুন দোকান খোলেন শঙ্কর। ফলে তাঁর দোকানে বিপুল পরিমাণ সোনারগয়না মজুত থাকার খবরও ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে।

শঙ্করের আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরেরবৈদ্যপুর গ্রামে। ঘটনার দিন কুড়ি আগেও তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। প্রতিবেশীর মেয়ের বিয়ে বা গ্রামের সামাজিককর্মসূচিতে অংশ নিতেন শঙ্কর। তাঁর খুনের খবর পেয়ে পড়শিরা পৌঁছন গ্রামের বাড়িতে। প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন বাইরে থাকলেও গ্রামের সঙ্গে ওঁর সম্পর্কছিল অটুট। শঙ্করের দাদা সন্তোষ জানা বলেন, ‘‘কালীপুজোর আগে আসার কথা ছিল। তারআগেই সব শেষ হয়ে গেল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Robber police investigation Baranagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy