Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে চলছে স্কুল

পাথরপ্রতিমার অচিন্ত্যনগর মণ্ডলের ঘেরি জুনিয়র হাইস্কুলের এই অবস্থার জন্য কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা।

শিক্ষকহীন: পাথরপ্রতিমার স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষকহীন: পাথরপ্রতিমার স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

স্কুলে একটিমাত্র শিক্ষক। তা দিয়েই চলছে ১০৭ জনের পড়াশোনা।

পাথরপ্রতিমার অচিন্ত্যনগর মণ্ডলের ঘেরি জুনিয়র হাইস্কুলের এই অবস্থার জন্য কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা।

সাগরের মৃত্যুঞ্জয় বালিকা বিদ্যালয় এবং বনগাঁর সভাইপুর জুনিয়র হাইস্কুলের মতো এই স্কুলেও একজনমাত্র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনিই কয়েক মাস ধরে স্কুলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এই অবস্থায় স্থানীয় আরও দুই যুবক স্কুলে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াচ্ছেন। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় অনেক অভিভাবকই এখন ছেলেমেয়েদের ৬ কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়তে পাঠাচ্ছেন।

পাথরপ্রতিমা ব্লকের বিডিও রথীনচন্দ্র দে বলেন, ‘‘নতুন করে নিয়োগ হলে ওই স্কুলে শিক্ষক পাঠানো হবে। তবে অতিথি শিক্ষক বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ প্রত্যন্ত ওই এলাকায় নদী পার হয়ে দূরের কোনও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ওই স্কুলে যেতে চাইবেন না। তাই স্থানীয় কোনও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ওই জুনিয়র হাইস্কুলের পাশেই রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বারে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৪ জন চতুর্থ শ্রেণি পাশ করেছে। তাদের মধ্যে জুনিয়র হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে ১৯ জন। বাকিরা দূরের কামদেবপুর হাইস্কুলে গিয়েছে।

ওই গ্রামের শিবশঙ্কর মান্না, মনোরঞ্জন দলুইরা জানান, ওই জুনিয়র স্কুলে স্থায়ী কোনও শিক্ষক নেই। তাই ছেলেকে দূরের স্কুলে ভর্তি করেছি। ওই স্কুলে হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি। তাঁদের দাবি, সরকার থেকে অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করা হোক।

এই জুনিয়র হাইস্কুলটি ২০১৩ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। অচিন্ত্যনগর মণ্ডলের ঘেরি গ্রামের কাছাকাছি কোনও হাইস্কুল না থাকায় ওই জুনিয়র স্কুলটি হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন বাসিন্দারাও। এলাকার বাসিন্দাদের দানের জমিতে একতলা ভবনে পঠনপাঠন শুরু হয়। কোনও দিনই স্থায়ী শিক্ষক ছিল না।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপকুমার দাসের বাড়ি ওই এলাকার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। মাস কয়েক আগে তিনি ওই স্কুলে যোগ দেন। স্কুল থেকে বাড়ি যাতায়াত করতে সময় লাগে প্রায় চল্লিশ মিনিট। এর জন্য তিনি পাঁচ হাজার টাকা বেতন পান। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের কথা ভেবে সাইকেল নিয়ে নিয়ম করে স্কুলে আসি।’’ সরকারি অনুদানের অভাবে স্কুল ভবনের পরিকাঠামোর সমস্যা রয়েছে বলেও তিনি জানান। অথচ বর্তমানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০৭ জন। তা দেখে এগিয়ে এসেছেন দুই যুবক আশিস বেরা ও গুরুপদ পাত্র। তাঁরা বলেন, ‘‘কচিকাঁচাদের কথা ভেবে বিনা পারিশ্রমিকেই পড়াতে এসেছি। আমরা চাই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হোক পাশাপাশি এই স্কুলকে হাইস্কুলে উন্নীত করা হোক।’’

তবে ওই স্কুলে শুধু শিক্ষকের সমস্যা নয়, পরিকাঠামোরও সমস্যা রয়েছে। স্কুলে কোনও বেঞ্চ নেই। এখনও পর্যন্ত কচিকাঁচাদের দল মাটিতে বসে ক্লাস করে। জানালার পাল্লা না থাকায় বর্ষায় স্কুলের ভিতর জলের ছাঁট আসে। তাতে পড়ুয়ারা ভিজে যায়। মিড ডে মিলের জন্য আলাদা কোনও ঘর নেই। স্কুলে কোনও পাঁচিলও দেওয়া হয়নি।

পাথরপ্রতিমার পূর্ব চক্রের স্কুল পরিদর্শক চৈতন্যদেব সাহা বলেন, ‘‘ওই স্কুলে অতিথি শিক্ষক দেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা দফতরে আবেদন করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE