Advertisement
E-Paper

ভাটপাড়ায় ফের শক্তিসঞ্চয় করছে তৃণমূল

দিনভর সেই আলোচনা ঘুরপাক খেল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সর্বত্র। টানা দু’মাস বোমা-গুলির লড়াই দেখেছে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দল। কিন্তু মাসখানেক ধরে প্রায় স্বাভাবিক ছবি ফিরেছিল এলাকাগুলিতে। 

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৯
চলছে পুলিশি টহল। ভাটপাড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

চলছে পুলিশি টহল। ভাটপাড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

প্রায় শান্ত হয়ে ওঠা একটা এলাকা কেন ফের অশান্ত হয়ে উঠল?

দিনভর সেই আলোচনা ঘুরপাক খেল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সর্বত্র। টানা দু’মাস বোমা-গুলির লড়াই দেখেছে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দল। কিন্তু মাসখানেক ধরে প্রায় স্বাভাবিক ছবি ফিরেছিল এলাকাগুলিতে।

রাজনৈতিক মহলের মত, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া তৃণমূল ফের ব্যারাকপুর মহকুমায় শক্তিসঞ্চয় করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। তার ফলে দু’পক্ষের লড়াই তীব্র হয়ে উঠছে। ফলে কোথাও গোলমাল বাধলে, তা আগের মতো একতরফা হচ্ছে না। রবিবারের গোলমাল সেই কারণেই এত বড় আকার নিল।

লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে পরেই ব্যারাকপুর মহকুমা জুড়ে বিজেপির দাপাদাপি শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ। সেই সময় গারুলিয়া, শ্যামনগর, জগদ্দল, কাঁকিনাড়া, ভাটপাড়া, নৈহাটি, কাঁচরাপাড়া, হালিশহরে তৃণমূলের বহু পার্টি অফিস বিজেপি দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। যদিও অর্জুনের অভিযোগ, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ফলেই ওই পার্টি অফিসগুলি বিজেপির হাতে এসেছিল। কারণ সেগুলি ওই কর্মীরা তৈরি করেছিলেন।

গন্ডগোলে মাথা ফাটল পুলিশের। ভাটপাড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

টানা দু’মাস ধরে কাঁকিনাড়া-ভাটপাড়ায় ব্যাপক গোলমাল চলে। সেই সময় তৃণমূল কার্যত ‘ব্যাকফুটে’ চলে গিয়েছিল। দখলে থাকা একের পর এক পুরসভা হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। গত দু’মাসে ব্যারাকপুর মহকুমায় তৃণমূলের কোনও মিছিল-মিটিং পর্যন্ত হয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মহকুমায় ভিত কিছুটা মজবুত করে ফেলে বিজেপি।

কিন্তু তলে তলে জমি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সুযোগ এসে যায় হালিশহর পুরসভার সিংহভাগ কাউন্সিলর বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়। পুরপ্রধান-সহ অধিকাংশ কাউন্সিলরই জানান, বিজেপিতে তাঁরা মানিয়ে নিতে পারছেন না। ওই কাউন্সিলরদের প্রত্যাবর্তনের পরেই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে তৃণমূল। এর পরে একে একে হাতছাড়া হওয়া প্রায় সব পুরসভাই তাদের হাতে এসে যায়। আর তার পরেই শুরু হয়ে যায় বিজেপি-তৃণমূলের গোলমাল।

এই মুহূর্তে ভাটপাড়া ছাড়া মহকুমার সব পুরসভা-ই ফের তৃণমূলের দখলে এসেছে। পুরসভা হাতে আসার পরেই ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষ বাড়তে শুরু করেছে। গত ১৫ দিনে নৈহাটিতে বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষ হয়েছে দু’বার। দু’বারই বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছিল। গোলমাল পাকানোর জন্য পুলিশ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া কাউন্সিলর গণেশ দাসকে গ্রেফতার করে। পার্টি অফিসের দখলকে কেন্দ্র করে হালিশহরের বালিভাড়ায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। পার্টি অফিসে আগুন ধরানো হয়।

এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, তৃণমূল ফের শক্তি সঞ্চয় করেছে। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে যে সব কর্মীরা ঘরে বসে গিয়েছিলেন, বা এলাকাছাড়া ছিলেন তাঁদের ফের ময়দানে দেখা যাচ্ছে। পার্টি অফিস ‘পুনরুদ্ধারে’ তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। বিজেপি বাধা দিতে এলে সংঘর্ষ বাধছে।শ্যামনগরের ফিডার রোডের যে পার্টি অফিসটি দখলকে কেন্দ্র করে গোলমাল ছড়াল রবিবার, সেটিও এক সময় তৃণমূলের ছিল। পরে সেটি বিজেপির দখলে যায়। যথারীতি সেই পার্টি অফিসটি তৃণমূল দখল করতে গেলে এলাকার বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেয় পুলিশ। দু’পক্ষের আলোচনায় ঠিক হয় পার্টি অফিস ছেড়ে দেবে বিজেপি।

রাজনৈতিক মহলের মতে, একের পর এক পার্টি অফিস হাতছাড়া হলে এলাকায় জনভিত্তি কমজোরি হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সেই জন্যই অর্জুন সিংহ এ দিন গোলমালে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তৃণমূল পাল্টা রুখে দাঁড়াতেই সংঘর্ষ বাধে। তৃণমূল যদি পর্যাপ্ত লোক জোগাড় করে‌ পাল্টা রুখে না দাঁড়াতে পারত, তা হলে কোনও গোলমালই হত না। ওই পার্টি অফিস বিজেপির দখলেই থেকে যেত।

Bhatpara Bhatpara Violence TMC BJP Arjun Singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy