E-Paper

বহু দিন পরে তৃণমূলের কর্মিসভায় সুভাষ, বিতর্ক

সুভাষ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে গোবরডাঙায় দল করেন। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পুরপ্রধান ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৬
গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত।

গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।

২০২২ সালে পুরভোটের পরে ফের সরাসরি তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতে দেখা গেল গোবরডাঙার প্রাক্তন তৃণমূল পুরপ্রধান সুভাষ দত্তকে।

মঙ্গলবার বিকেলে গোবরডাঙা টাউন হলে আয়োজিত কর্মিসভার মঞ্চে তাঁকে দেখা যায়। যা নিয়ে জেলা তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সুভাষ প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তাঁর এই মঞ্চে যাওয়া নিয়ে দলের তথাকথিত নবীণ প্রজন্মের জেলার নেতারা প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের বক্তব্য, সুভাষকে কি দলে নেওয়া হয়েছে। কার অনুমতি নিয়ে তাঁকে দলের কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ করা হল?

সুভাষ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে গোবরডাঙায় দল করেন। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পুরপ্রধান ছিলেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গিয়েছে ২০২২ সালের পুরভোটে দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। পরে দলের নির্দেশে নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। সেই মতো লিফলেটও ছড়িয়েছিলেন। শুরুতে খানিকটা নিমরাজি থাকলেও পরে দলের অন্য প্রার্থীদের হয়ে প্রচারেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পেরিয়েছে ততক্ষণে। এই অবস্থায় নির্দলের টিকিটেই ভোটে জিতে তাক লাগিয়ে দেন সুভাষ।

পুরভোটের আগে তৃণমূলের ঘোষিত নীতি ছিল, দলের কেউ নির্দল হিসেবে জয়ী হলেও তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। ফল প্রকাশের পরে জেলায় তৎকালীন পুরভোটের কো-অর্ডিনেটর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দলের গাউডলাইন হল, নির্দল কাউকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। সুভাষের বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হবে। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, সুভাষকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা তৃণমূল নেতৃত্ব কখনও প্রকাশ্যে জানাননি। পুরভোটে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ যাঁরা নির্দল বা অন্য দলের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের ৬১ জনকে দল বহিষ্কার হয়েছিল। তবে ওই তালিকায় কারা ছিলেন। তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই সুভাষকে নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট হয়নি। ভোটে জিতে সুভাষও নিজেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে কার্যত গুটিয়ে নিয়েছিলেন। দলের তৃণমূলের কর্মসূচিতে যেতেন না। দলের সঙ্গে টানাপোড়েন তাঁর নতুন নয়। গোবরডাঙা হাসপাতালের দাবি তুলে প্রশাসনিক সভায় এক বার মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েছিলেন সুভাষ। পরে ওই দাবিতে এলাকায় বন্‌ধ হয়। তাতে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছিল। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে পদত্যাগ করেন সুভাষ। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন। পুরপ্রধানের পদে ছিলেন তারপর আরও বেশ কিছু দিন।

হঠাৎ মঙ্গলবার সভায় গেলেন কেন? সুভাষের কথায়, ‘‘আমি তৃণমূল দলটাই করি। এত দিন নিষ্ক্রিয় ছিলাম। আমার কাজকর্ম ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান নির্মল ঘোষের নির্দেশে লোকসভা ভোটের আগে সক্রিয় হলাম। এখন থেকে গোটা পুরসভা এলাকা জুড়ে তৃণমূলের হয়ে কাজ করব।’’ কর্মিসভায় ছিলেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা প্রবীণ তৃণমূল নেতা গোবিন্দ দাস। তিনি বলেন, ‘‘সুভাষদা তো কখনও তৃণমূলের বাইরে ছিলেন না। এত দিন চুপচাপ ছিলেন। এখন সক্রিয় হলেন।’’ জেলার নবীন নেতৃত্ব এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চান না। এক নেতার কথায়, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, নির্দলে জেতা কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। তা হলে কার নির্দেশে সুভাষকে ফেরানো হল?’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের প্রবীণ নেতারাই সুভাষকে দলে টেনেছেন। এ বিষয়ে নির্মল বলেন, ‘‘সুভাষ তো যত দূর শুনলাম তৃণমূলের বাইরে ছিলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ নিয়ে বাকি জীবনটা কাজ করতে চান। এতে সমস্যা কোথায়!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gobardanga

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy