Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

৩ কিলোমিটার পথ পেরোতে লেগে যায় পাক্কা ৪৫ মিনিট

ভোটের সময়ে অতি অবশ্য মেলে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোট মিটলে পরিস্থিতি যে কে সেই। বছরের পর বছর এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত মানুষ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।ফের দরজায় কড়া নাড়ছে ভোট। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও কর্মীরা এলাকার প্রধান সমস্যা যানজটের সমাধান ও উড়ালপুল তৈরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দরজায় হাজির হচ্ছেন।

গতিহীন শহর। ছবি: শান্তনু হালদার।

গতিহীন শহর। ছবি: শান্তনু হালদার।

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

ফের দরজায় কড়া নাড়ছে ভোট। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও কর্মীরা এলাকার প্রধান সমস্যা যানজটের সমাধান ও উড়ালপুল তৈরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দরজায় হাজির হচ্ছেন। এমন প্রতিশ্রুতি অবশ্য হাবরার মানুষের কাছে নতুন কিছু নয়। প্রত্যেকবারই প্রার্থীরা এসে যশোর রোডে রেললাইনের উপরে দু’টি উড়ালপুল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।

৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বা যশোর রোডে যানজটের কবলে পড়ে হাঁসফাঁস করাটা বহু দিন ধরেই নিজেদের ‘ভবিতব্য’ বলে মেনে নিয়েছেন শহরবাসী। যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে শহরের ১ ও ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় যশোর রোডে রেল লাইনের উপরে দু’টি উড়ালপুল তৈরির দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। কিন্তু আজও তা তৈরি না হওয়ায় হতাশ সকলে।

যানজটের জন্য ১ নম্বর রেলগেট এলাকা থেকে চোংদা মোড় পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার পথ পেরোতে দিনের ব্যস্ত সময়ে ৪০-৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়। যানজটের অন্যতম কারণ অপরিসর রাস্তা। তার আবার দু’টো দিক হকারদের দখলে। বেআইনি ভাবে যান চালকেরা রাস্তার উপরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন। ট্রাক, ভ্যান, অটো রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে সচেতনতার অভাব। তাঁরাও বাইক বা সাইকেল সড়কের উপরে রেখে দুনিয়ার কাজ সেরে হেলতে দুলতে ফেরেন।

পুরসভার পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে অস্থায়ী দোকানদার বা সড়কে বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ধরে জরিমানা করা হয়। তারপর কয়েক দিন সব ঠিকঠাক থাকে। পুরসভা ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সড়কের পাশ থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের জন্য ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় একটি হকার্স মার্কেট তৈরি করে সেখানে পুনর্বাসনও দেওয়া হয়েছে। জয়গাছিতে তৈরি করা হয়েছে বাস টার্মিনাস। তারপরেও সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি।

পুরপ্রধান নীলিমেশ দাসের অবশ্য দাবি, শহর এখন অতীতের তুলনায় অনেকটাই যানজট মুক্ত। পুরসভার পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুরসভার কর্মীরা সড়কে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করেন।

এই দাবি অবশ্য মানতে পারছেন না শহরের মানুষজন।

বাম আমলে প্রয়াত ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী ও দমদমের প্রয়াত সাংসদ অমিতাভ নন্দী হাবরায় এসে উড়ালপুল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও স্থানীয় বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও উড়ালপুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই তা পূরণ করতে পারেননি। তবে যানজট সমস্যা মেটাতে উড়ালপুল যে দরকার, তা মানে সব পক্ষই।

হাবরায় এ বারের সিপিএম প্রার্থী আশিসকন্ঠ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘গত বিধানসভা ভোটে জ্যোতিপ্রিয়বাবু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শহরে উড়ালপুল তৈরি করবেন। এরপরে কখনও মাটি পরীক্ষা হয়েছে, আবার কখনও বাস্তুকার নিয়ে এসে সমীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু উড়ালপুল আজও আমরা পেলাম না।’’ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সমাদ্দার জানান, সব কিছুই প্রতিশ্রুতিতেই থেকে গিয়েছে।

কী পরিস্থিতিতে রয়েছে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা?

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি শেষ হয়েছে দু’টি উড়ালপুল বা আরওবি (রেলওয়ে ওভার ব্রিজ) তৈরির জন্য জমির চিহ্নিতকরণের কাজ। কাজের বেশির ভাগ টাকাই দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। বাকিটা দেবে রাজ্য। তবে আপাতত শুধু এটুকুই।

জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, দু’টি উড়ালপুর তৈরির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। বিধানসভা ভোটের জন্য কাজ শুরু করা যায়নি। ভোট মিটে গেলেই কাজ শুরু হবে। মন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্রের অসহযোগিতার ফলেই উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।

তা ছাড়া, কাজ শুরু করতে এলে বহু দোকানপাট ভাঙা পড়বে। যা নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, ‘‘জয়গাছি এলাকায় আমরা পাঁচতলা একটি হকার্স মার্কেট তৈরি করছি। সেখানে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে।’’

শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দা হতাশার সুরে বললেন, রাস্তায় বেরিয়ে রোজ নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে করতে সব সয়ে গিয়েছে। ভাল কিছু আর আশা করি না। বছর বছর খালি ভোটই দিয়ে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Jam CPM TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE