Advertisement
E-Paper

Library: মোবাইলে আসক্তি কমাতে উদ্যোগ, স্কুলের গাছতলায় ‘পাঠাগার’

ছাত্রটি স্কুলের ছাতিম গাছের তলায় বসে গল্পের বই পড়তে শুরু করে।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৫০
খোসমেজাজ: গাছতলায় গল্পের বই পড়ছে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

খোসমেজাজ: গাছতলায় গল্পের বই পড়ছে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে এসে শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে লুকিয়ে মোবাইলে গেম খেলছিল এক ছাত্র। প্রধান শিক্ষক কখন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, টেরই পায়নি। হঠাৎ খেয়াল হতেই ঘাবড়ে যায়। ভেবেছিল, শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু উঁচু ক্লাসের ওই ছাত্রকে বকলেন না মাস্টারমশাই। শুধু তার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা গল্পের বই। বললেন, ‘‘পড়ে দেখ, এটা অনলাইন গেমের চেয়ে বেশি ভাল।’’

ছাত্রটি স্কুলের ছাতিম গাছের তলায় বসে গল্পের বই পড়তে শুরু করে। ছুটির সময়ে বই ফেরত দিয়ে ফোন নিয়ে প্রধান শিক্ষককে জানায়, গল্পের বই তার ভাল লেগেছে। স্কুলে এসে আর কখনও গেম খেলবে না।

ঘটনাটি হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের। প্রধান শিক্ষক জানান, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়াদের অভিভাবেকরা বার বারই ছেলেমেয়েদের মোবাইল আসক্তির কথা জানাচ্ছেন। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছিল শিক্ষকদেরও। ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে গাছতলায় গল্পের বই পড়ার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।

করোনা পরিস্থিতিতে বহুদিন ধরেই মোবাইলের স্ক্রিনে ক্লাস করতে হয়েছে পড়ুয়াদের। দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহারের ফলে অনেকেই গেম, সোশ্যাল সাইটে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া, বহুদিন বাদে স্কুলে এসে দীর্ঘক্ষণ ক্লাসে মাস্ক পরে ক্লাস করতেও মন বসছিল না অনেকের। তাই স্কুলের তরফে পড়ুয়াদের বলা হয়, কারও যদি দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে ক্লাস করতে সমস্যা হয়, তা হলে শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য স্কুলের গাছতলায় বসে পছন্দের গল্পের বই পড়তে পারে। ছাতিম গাছের নীচে রাখা হয়েছে টিনটিনের গল্প, ভ্রমণ কাহিনি, বিভিন্ন দেশের গল্প, ক্যুইজ়, ধাঁধার বই, অঙ্ক নিয়ে মজার খেলা ইত্যাদি।

ক্লাসের ফাঁকে গল্পের বই পড়তে এল নবম শ্রেণির লিপিকা পরভিন, একাদশ শ্রেণির অদিতি মণ্ডল, কৌশিক মণ্ডল, দশম শ্রেণির অয়ন মণ্ডলেরা। অদিতি বলে, ‘‘প্রথমবার টিনটিনের গল্প পড়লাম। খুব ভাল লাগল।’’

প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পরীক্ষামূলক ভাবে স্কুলের ছাতিম গাছের তলায় কিছু বই ও বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রথম দিন ভাল সাড়া মিলেছে। মোবাইল আসক্তি কাটাতে বকাঝকা না করে নেশার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’’

তিনি আরও জানান, বই পড়াকে আরও আকর্ষণীয় করতে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন শিক্ষকেরা। কয়েকদিনের মধ্যে স্কুলের সব গাছতলায় পড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন গল্পের বই রাখা হবে। থাকবে বসার ব্যবস্থা। পাশাপাশি স্কুলের তরফে প্রত্যেক সপ্তাহে ক্যুইজ়ের আয়োজন করা হবে বই পড়ার উপরে। সঠিক উত্তর দিতে পারলে একটি বই দেওয়া হবে। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমরা মনে করি, পড়ুয়াদের মধ্যে বই পড়ার নেশা কৌশলে গড়ে তোলা গেলে মোবাইলের নেশা স্বাভাবিক ভাবেই চলে যাবে।’’

এই বিষয়ে মনোবিদ শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে সব পড়ুয়ার মোবাইল আসক্তি কাটানোর জন্য বই পড়া একমাত্র মাধ্যম না-ও হতে পারে। বিভিন্ন খেলার প্রশিক্ষণ, নাটকের আয়োজন, ছবি আঁকার ওয়ার্কশপ ইত্যাদির মাধ্যমেও ছাত্রছাত্রীদের মোবাইলের নেশা কাটানো যেতে পারে।’’ তিনি আরও জানান, একদিনে যেমন আসক্তি তৈরি হয় না, তেমনই একদিনেই এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসাও অসম্ভব। তবে বিচক্ষণতা, সহমর্মিতা নেশা কাটিয়ে তুলতে পারে।

library Mobile Addiction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy