চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকেই পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ শুরু হয়েছিল পেট্রাপোলের সুসংহত চেকপোস্টে। বৃহস্পতিবার যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল।
শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭২ সাল থেকে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের কাজ শুরু হয়। গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েছে। সুসংহত চেকপোস্টটি ১০৭ একর জমির উপরে তৈরি হয়েছে। ২০১৫-১৬ আর্থিক বর্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে ওই বন্দর দিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। যা থেকে শুল্ক দফতরের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা।
বাণিজ্য বাড়লেও এত দিন পর্যন্ত বন্দরের পরিকাঠামো ছিল নড়বড়ে। নিরাপত্তারও অভাব ছিল। সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্পোরেশনের ট্রাক পার্কিংয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এসে ট্রাক থেকে মালপত্র চুরি করে নিয়ে যেত। ট্রাকগুলিতে একশো শতাংশ তল্লাশির ব্যবস্থাও ছিল না। নো ম্যানস ল্যান্ডেই পণ্য ওঠানো নামানোর কাজ হতো। পার্কিংয়ে যথেষ্ট জায়গা না হওয়ায় যশোর রোডের পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত ট্রাক। সব মিলিয়ে ছিল অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি।
সে কারণেই কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২০১১ এখানে সুসংহত চেকপোস্ট তৈরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২৭ অগস্ট শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা ছিল, সতেরো মাসের মধ্যে চেকপোস্ট তৈরি হবে। বাস্তবে অবশ্য তা হয়নি। সময় লেগেছে অনেকটাই বেশি।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুল্ক ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া, বিএসএফের প্রতিনিধিরা। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের আমন্ত্রণ করা হয়। তবে বিশেষ কাউকে দেখা যায়নি। বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় হাজির ছিলেন। ছিলেন বিজেপি নেতা কেডি বিশ্বাসও। তিনি চেকপোস্টের মূল ভবনের ওই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান দেখে হতাশ। ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, ‘‘কেন্দ্রের অনুষ্ঠান। অথচ চুড়ান্ত দায়সারা ভাবে করা হল। বনগাঁর মানুষ কেউ জানতেই পারলেন না।’’ দু’দেশের সরকার এই চেকপোস্ট নিয়ে যতই উৎসাহিত হোন না কেন, ব্যবসায়ীরাও এখনও চেকপোস্ট দিয়ে বাণিজ্যের কাজ শুরু করতে উৎসাহী নন। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, নতুন চেকপোস্ট এলাকায় দু’টি রাস্তা আছে। আরও একটি রাস্তা না বাড়ানো হলে বাণিজ্যের কাজে গতি আসবে না। চেকপোস্টে পণ্য লোডিং আনলোডিংয়ের এলাকায় কোনও ছাউনি নেই। ফলে বর্ষায় কাজে বিঘ্ন হচ্ছে। ট্রাক তল্লাশির জন্য স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়নি। এখন বাণিজ্যের কাজ অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে। কিন্তু এখানে ইন্টারনেট লিঙ্কও থাকছে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই, কর্তৃপক্ষ ওই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান করে চেকপোস্ট দিয়ে পুরো গতিতে বাণিজ্যের কাজ শুরু করার ব্যবস্থা করুক।’’ ব্যবসায়ীদের আশা, এই ছোটখাট সমস্যা মিটে গেলে বাণিজ্য গতি অবশ্যই আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy