Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
৩২টি প্রাণহীন গাছ কেটে ফেলার তোড়জোড় শুরু
Trees

Tree: একের পর এক গাছের রহস্য-মৃত্যু

মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। গাছের অকাল মৃত্যুর পিছনে কাঠ পাচারকারীদের হাত থাকতে পারে বলেও অভিযোগ৷

রামনগর রোডের পাশে, ঝাউডাঙা ও বর্ণবেড়িয়ার মাঝে মরা গাছের সারি।

রামনগর রোডের পাশে, ঝাউডাঙা ও বর্ণবেড়িয়ার মাঝে মরা গাছের সারি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২২ ০৭:৫৫
Share: Save:

একের পর এক দেহ রাখছে জ্যান্ত, সতেজ গাছগুলি। কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে এখন সার দিয়ে।

গত কয়েক মাসের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সড়কের দু’পাশে প্রচুর গাছের রহস্য-মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। এ বার বনগাঁ মহকুমার রামনগর রোডের দু’পাশে থাকা বেশ কিছু গাছেরও মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। পরিবেশ দিবসে সে কথা জানতে পেরে মন খারাপ পরিবেশপ্রেমীদের।

গাইঘাটা থানার আংরাইল থেকে ঝাউডাঙা এলাকার মধ্যে রাস্তার দু’ধারে থাকা গাছগুলি মারা গিয়েছে। ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই ৩২টি গাছের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, পাশের রামনগর পঞ্চায়েত এলাকাতেও কয়েকটি গাছ মারা গিয়েছে। এর আগে হাবড়া থানার কুমড়া পঞ্চায়েতের বাঘাডাঙা মোড় থেকে মাকালতলা যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে ২১টি গাছের অকাল মৃত্যু ঘটেছিল। বসিরহাট মহকুমার মাটিয়া থানা এলাকাতেও একই ভাবে অনেক গাছের মৃত্যু হয়েছে গত কয়েক মাসে। যশোর রোডে দু’পাশেও কয়েকটি প্রাচীন গাছের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। অবসরপ্রাপ্ত জীববিজ্ঞানের শিক্ষক অজয় মজুমদারে কথায়, ‘‘প্রথমত সাইটালিডিয়াম ডিমিডিয়াটাম ছত্রাকের আক্রমণে ডাইব্যাক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগে বর্ধমানে একের পর এক শিরীষ গাছ মারা যাচ্ছে৷ মানুষের দেহেও এর সংক্রমণ ঘটতে পারে৷ পশ্চিমবঙ্গে একাধিক চা বাগানে এই ছত্রাকের আক্রমণের ফলে চা শ্রমিকদের হাত-পায়ের নখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ বর্ধমানের তেলিপুকুর এলাকায় বেশ কয়েকটি জায়গায় এ ভাবে শিরীষ গাছ মারা যায়৷’’

গাছের অকাল মৃত্যুর পিছনে কাঠ পাচারকারীদের হাত থাকতে পারে বলেও অভিযোগ৷ কাঠ পাচারকারীরা রোগবাহী ছত্রাক ব্যবহার করে গাছের মৃত্যু ঘটাতে পারে বলেও মনে করেন অজয়।

তিনি জানান, মধ্যপ্রাচ্যের ওমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সাইটালিডিয়াম ডিমিডিয়াটাম ছত্রাকই শিরীষ গাছের মৃত্যুর কারণ৷ এই ছত্রাক আট ধরনের গাছের উপরে হামলা চালাচ্ছে৷ এই ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হতেই পলি ফাঙ্গাস আক্রমণ চালায়৷ গাছ ছাতুর মতো গুঁড়ো হয়ে যায়। এক সময়ে ভেঙে পড়ে। তাঁর মতে, অবিলম্বে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন৷ দুষ্কৃতীরা এই ছত্রাক সংগ্রহ করে গাছের কাণ্ডে খানিকটা গর্ত করে তা ছড়িয়ে দিলে পুরো গাছে সংক্রমণ ধরে যায়।

ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত এলাকায় গাছ মরা নিয়ে প্রধান সমীরকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘বন দফতর ও পূর্ত দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারা এসে মরা গাছগুলি শনাক্ত করে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৩২টি মৃত গাছের সন্ধান মিলেছে। তবে কী কারণে গাছ মারা গেল, তা বোঝা যাচ্ছে না।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মৃত গাছগুলির মধ্যে বেশিরভাগ শিরীষ। মাস পাঁচেক আগেও সেগুলি সতেজ ছিল। গাছগুলির বয়স ২৫-৩০ বছর।

বনগাঁর বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষক সন্দীপ ঘোষ রোজ ওই রাস্তা দিয়ে বাইক চালিয়ে স্কুলে যান। তিনি বলেন, ‘‘যাতায়াতের সময়ে খুবই আতঙ্কে থাকি। কারণ, মরা গাছের ডাল ভেঙে ঝুলে আছে। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে।’’

বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন, প্রাকৃতিক কারণেই যদি গাছের মত্যু হয়ে থাকে, তা হলে বাকিগুলি সুস্থ কী করে আছে! গাছ মারার পিছনে মানুষেরই ভূমিকা আছে বলে সন্দেহ প্রকৃতিপ্রেমী বহু মানুষের।

স্থানীয় কিছু চাষি আবার জানালেন, গাছগুলিতে এক ধরনের পোকা এসে বসছে। ওই পোকা আশপাশের খেতের ফসলও নষ্ট করে দিচ্ছে।

এলাকাটি সীমান্ত-লাগোয়া। রাস্তার একপাশে কাঁটাতার। কাঠ পাচারকারীরা গাছ মেরে ফেলতে পারে বলে অনেকেরই আশঙ্কা। যদিও পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, দুষ্কৃতীরা গাছ মারতে পারে না, কারণ ওই এলাকায় সব সময়ে বিএসএফের নজরদারি থাকে। বন দফতরের বনগাঁ মহকুমার রেঞ্জ অফিসার চিরব্রত রায় বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, কোনও ছত্রাকের আক্রমণেই গাছগুলি মারা গিয়েছে। পূর্ত দফতরকে (সড়ক) অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ৩২টি মরা গাছ কেটে ফেলতে। পরিবর্তে তাদের ৬৪টি নতুন গাছ লাগাতে হবে।’’.

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Trees Dying
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE