Advertisement
E-Paper

কী করে ওদিকে গেল ওরা, হতবাক সেনডাঙা

ঝড়ের পর থমথমে গ্রাম।খেলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় অরূপ বিশ্বাস (১১) ও শুভমিতা শীল (১২)। জখম হয় পাঁচ বছরের গণেশ। শুভমিতার প্রতিবেশী শেফালি বিশ্বাস বলেন, “গ্রামের শেষ প্রান্তে ওই পোলট্রির কাছে কী করে গেল ওরা? ওখানে তো ওরা খেলে না!”

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৩

সেনডাঙা এলাকার আনন্দপাড়ায় প্রায় শ’হাত লম্বা, পনেরো হাত চওড়া, টিন-নেট দিয়ে ঘেরা মুরগির খামার। বাইরে তার দিয়ে ঘেরা। আর সেই তারেই হুকিং করে বিদ্যুৎসংযোগ করা।

সেখানেই খেলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় অরূপ বিশ্বাস (১১) ও শুভমিতা শীল (১২)। জখম হয় পাঁচ বছরের গণেশ। শুভমিতার প্রতিবেশী শেফালি বিশ্বাস বলেন, “গ্রামের শেষ প্রান্তে ওই পোলট্রির কাছে কী করে গেল ওরা? ওখানে তো ওরা খেলে না!”

ঘটনার পরে পোলট্রি মালিক ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস ও তার দিদি রিনা বিশ্বাসের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সংলগ্ন আত্মীয়ের বাড়িও। ভস্মীভূত হয়ে যায় তাদের আরও চারটি পোলট্রি ফার্ম। দমকল আগুন নেভাতে এলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের আটকে দেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে অশোকনগর থানার পুলিশ। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “অভিযুক্ত দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে।”

ঝুলছে হুকিংয়ের তার

শুক্রবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গোটা গ্রামে শোকের আবহ। অনেকে কাজে বেরোননি, হাঁড়ি চড়েনি বাড়িতে। শামেনা বিবি, বিনয় মণ্ডলরা জানান, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে খাওয়া-দাওয়া করিনি। উনুন জ্বালানোরও ইচ্ছে নেই।”

শুক্রবার বিকেলে দেহ পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সকলে। মিনিট পঁচিশ রাস্তা অবরোধ করে জনতা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পোলট্রি মালিকদের অবশিষ্ট সম্পত্তিও। যে তার দিয়ে হুকিং করে পোলট্রির আলো জ্বলত, তা-ও কেটে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

ভাঙচুরের পরে

শুভমিতার বাবা শচীন্দ্র শীল ভিক্ষে করেন। তাঁর কথায়, “অন্য দিন খেলতে যাওয়ার আগে আমাকে বলে যায়। এ দিন আমি ঘুমিয়ে পড়ায় জানতে পারেনি। পরে গিয়ে মেয়ের দেহ দেখতে পাই। যারা হুকিং করে এ কাজ করল, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।” অরূপের মা বারান্দায় শুয়ে কাঁদছিলেন। কার্যত কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ মণ্ডল, তাজকিনা বিবি, গোবিন্দ বিশ্বাসদের বক্তব্য, মালিকেরা কেন ইলেকট্রিক লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগের কথা গ্রামের লোককে জানায়নি? পোলট্রিতে চোর বা শেয়াল-কুকুরের উৎপাতের যে দোহাই দিয়েছেন মালিকেরা, তা মানতে নারাজ স্থানীয় মানুষ। ভুরকুণ্ডা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, “পরিবেশ দূষণের কারণে পোলট্রি ব্যবসায় অনুমতি দেওয়া হয় না। এই ঘটনার ব্যাপারে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হবে।”

শোকার্ত পরিবার

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হাবরা ডিভিশন অফিস সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হবে। হুকিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এ দিন দেখা যায়, তার মেরামত করছেন বণ্টন কর্মীরা। তবে একটি শিবমন্দির ছাড়া কোথাও হুকিংয়ের ঘটনা দেখা যায়নি।

ছবি: শান্তনু হালদার

Electrocute Sendanga Electric Hocking Hocking Electric
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy