Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাশে শিক্ষিকারা, মনের জোরেই মাধ্যমিক পার

এ বছর সারা রাজ্যে ১৮৫ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া মাধ্যমিক দিয়েছিল। ফল প্রকাশের পরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানায়, তাদের মধ্যে পাশ করেছে ১৭৫ জন।

শিক্ষিকার সঙ্গে মৌমিতা কর (মাঝে) ও জাকিয়া সুলতানা। দেগঙ্গার স্কুলে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

শিক্ষিকার সঙ্গে মৌমিতা কর (মাঝে) ও জাকিয়া সুলতানা। দেগঙ্গার স্কুলে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০৩:৩১
Share: Save:

ওদের জন্য ছিল না আলাদা স্কুল। অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গেই তারা ক্লাস করেছে। সম্বল ছিল শুধু মনের জোর আর স্কুলের দিদিমণিদের হাল-না-ছাড়া মনোভাব। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার ওই দুই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রী মৌমিতা কর এবং জাকিয়া সুলতানা এ বার সফল মাধ্যমিকে। উচ্চ মাধ্যমিকেও তাদের একই ভাবে পড়াশোনা করানোর জন্য ইতিমধ্যেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন দেগঙ্গার কার্তিকপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যাপীঠের শিক্ষিকারা।

প্রসঙ্গত, এ বছর সারা রাজ্যে ১৮৫ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া মাধ্যমিক দিয়েছিল। ফল প্রকাশের পরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানায়, তাদের মধ্যে পাশ করেছে ১৭৫ জন।

দেগঙ্গার আমিনপুরের বাসিন্দা, পেশায় দিনমজুর গৌরসুন্দর করের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মৌমিতা। জন্ম থেকেই সে অসুস্থ। মা কবিতা কর জানালেন, মৌমিতা কানে শুনতে পায় না, ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না। সেই অবস্থায় পড়া চালিয়ে ইংরেজিতে লেটার নিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছে। প্রাপ্ত নম্বর ৩৯৭। কবিতা বলেন, ‘‘স্কুলের দিদিমণিরা ওকে আলাদা করে ক্লাস নিয়ে, ওর মতো করে বুঝিয়ে পড়িয়েছেন। তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।’’

কার্তিকপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যাপীঠ থেকেই মাধ্যমিকে বসেছিল দেগঙ্গার খেজুরডাঙার জাকিয়া। তার বাবা আইনাল হক মণ্ডল সল্টলেকের একটি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। মা শাহানারা বিবি প্রাথমিক স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা। ছোট থেকে জাকিয়া মানসিক ভাবে অসুস্থ। সেই মেয়েও এ বার ৩৫৮ পেয়ে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আইনাল বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের জন্য এলাকায় আলাদা স্কুল নেই। শিক্ষিকারা নিজের মেয়ের মতো ওকে পড়িয়েছেন। কাজটা খুব সহজ ছিল না। সমস্ত কৃতিত্ব তাঁদের।’’

জাকিয়া বা মৌমিতার কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রেজিনা পরভিন বলেন, ‘‘২০৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ওরা দু’জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় স্কুলেরই কয়েক জন শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ওদেরকে ওদের বোঝার মতো করে পড়িয়েছেন। এত কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা করে ওরা পাশ করায় আমরা ভীষণ খুশি।’’

অরিত্রা মণ্ডল, সোমা ঘোষ, বীথি মাইতি, সুদেষ্ণা রায়ের মতো শিক্ষিকারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুই মেয়ের। অরিত্রা বলেন, ‘‘এমন ছেলেমেয়েদের পড়ানো খুব কঠিন। তবুও হাল ছাড়িনি। ওদের দু’জনকে আলাদা ঘরে, ওদের মতো করে হাত, মুখ ও চোখের ভাবভঙ্গি করে পড়াতে হয়েছিল।’’

মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরেই ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকেরা স্কুলের শিক্ষিকাদের হাত ধরে আবেদন করেন, ফের যেন তাদের পড়ানোর দায়িত্ব নেন তাঁরা। না হলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, আলাদা স্কুল না থাকায় অন্যত্র মেয়েদের নিয়ে গিয়ে পড়ানোর সামর্থ্য তাঁদের নেই। সব শুনে ফের এগিয়ে এসেছেন অরিত্রা-সোমা-বীথিরা। ওই দু’জনকে উচ্চ মাধ্যমিকের বৈতরণী পার করাতে হবে যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Special Child Deganga Teachers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE