অনির্বাণ হালদার।
ফুটবল খেলতে বেরিয়েছিল ছেলেটি। শেষমেশ বছর সতেরোর কিশোরের দেহ মিলল ইছামতীর জলে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অনির্বাণ হালদার। বসিরহাটের কাছারিপাড়ায় স্টেডিয়ামের পাশে তার বাড়ি। বন্ধুদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার খেলতে বেরিয়েছিল সে। আর ফেরেনি। শুক্রবার দুপুরে তার দেহ বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামের কাছে নদীর জলে ভাসতে দেখা যায়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ মৃতের তিন বন্ধুকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ঠিক কী ভাবে মারা গেল ছেলেটি, তা বলা সম্ভব নয়।
পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, ১০-১২ জন বন্ধুর সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংগ্রামপুরে একটি ইটভাটার মাঠে ফুটবল খেলতে বেরিয়েছিল অনির্বাণ। খেলায় অন্য টিম না আসায় তারা ইছামতীর ধারে বসেছিল। পরে তারা ইছামতীর চরে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছু়ড়ি খেলছিল। অনির্বাণের সঙ্গীরা পুলিশকে জানিয়েছে, সন্ধের দিকে চারজন চর ছেড়ে বেশ খানিকটা নদীর জলের দিকে এগিয়ে যায়। সে সময়ে নদীর জল বাড়ছিল। তিনজনের পায়ের তলা থেকে জলের তোড়ে বালি সরে যাচ্ছিল দ্রুত। ভারসাম্য হারাতে থাকে তারা। যা দেখে পাড়ে থাকা লোকজন ছুটে আসেন। দু’জনকে উদ্ধার করা গেলেও ভেসে যায় অনির্বাণ।
ছেলের খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় রাতে। তারই ভিত্তিতে ওই কিশোরের তিন বন্ধুকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। ঘটনাস্থলেও যায় পুলিশ। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে অর্নিবাণের একজোড়া জুতো উদ্ধার হয়। এরপরে ইছামতী নদীতে তল্লাশি চালানোর সময়ে পুলিশ বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামের কাছ থেকে ওই কিশোরের মৃতদেহ ভাসতে দেখে।
পুলিশের কাছে অবশ্য ভাটাকর্মীরা জানিয়েছেন, যারা কাদা ছোড়াছুড়ি খেলছিল, তাদের দেখে মনে হচ্ছিল সকলে নেশা করে রয়েছে। প্রায়ই ওরা এ ভাবে নদীর চরে খেলতে আসে। কিন্তু নদীর জল যে বাড়ছে, সে দিকে খেয়াল করেনি। তবে চিৎকারের মধ্যে ভাটা কর্মীরা দু’জনকে চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে দেখে উদ্ধার করে। কিন্তু ওই ছেলেরা পাড়ে উঠে হাসাহাসি করছে দেখে বিরক্ত হন উদ্ধারকারীরা। এক কিশোরকে চড়ও মারা হয়। কিন্তু তৃতীয় কেউ যে জলে ভেসে যাচ্ছে, সে কথা কেউ তাদের বলেইনি।
অনির্বাণের বাবা সুবীর হালদার, মা কবিতা বলেন, ‘‘ছেলে যে জলে তলিয়ে গিয়েছে, সেই খবরটাই তার সঙ্গীরা কেন দিল না, কে জানে। তা ছাড়া যে ছেলে সাঁতার জানে না বলে ভয়ে পুকুরে পর্যন্ত স্নান করতে নামত না। সে ছেলে কী ভাবে নদীতে নামল, তা-ও আমরা ভেবে পাচ্ছি না।’’ সদ্য সন্তানহারা বাবা-মায়ের দাবি, ‘‘আমরা চাই, ও ঠিক কী ভাবে মারা গেল, তা জানতে সঠিক তদন্ত করুক পুলিশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy