Advertisement
E-Paper

কোজাগরীর রাতে নিষ্প্রদীপ থাকল মছলন্দপুরের গ্রাম

বুধবার সিকিম থেকে ফিরলেন পাঠক পরিবারের চার জন। এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক বিভাসকান্তি, তাঁর বাবা ব্রজেন্দ্রনাথ, মা আশালতা, জ্যাঠতুতো দিদি লিলি। বেড়াতে গিয়ে পর্যটকেরা ফেরেন অনেক গল্প নিয়ে। ডাক্তারবাবুদের নিয়েই অবশ্য এখন মুখে মুখে ফিরছে নানা গল্প।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৩
ভিড়: বিভাসের বাড়ির সামনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

ভিড়: বিভাসের বাড়ির সামনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

অ্যাম্বুল্যান্স থেকে একে নামানো হচ্ছিল কফিনবন্দি দেহগুলি। প্রাথমিক স্কুলের মাঠে তখন কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়।

বুধবার সিকিম থেকে ফিরলেন পাঠক পরিবারের চার জন। এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক বিভাসকান্তি, তাঁর বাবা ব্রজেন্দ্রনাথ, মা আশালতা, জ্যাঠতুতো দিদি লিলি। বেড়াতে গিয়ে পর্যটকেরা ফেরেন অনেক গল্প নিয়ে। ডাক্তারবাবুদের নিয়েই অবশ্য এখন মুখে মুখে ফিরছে নানা গল্প।

মছলন্দপুরের নতুনপল্লির বহু বাড়িতে এ দিন হাঁড়ি চড়েনি। বাড়িতে লক্ষ্মী প্রতিমা কিনে রেখে সন্ধেয় পুজো করবেন ভেবেছিলেন যাঁরা, তাঁদের অনেকের ঘরে শাঁখ-ঘণ্টা বাজেনি। কেউ নমো নমো করে পুজো সেরেছেন। কারও আর মন্ত্রোচ্চারণের মতো মনের অবস্থা ছিল না। মছলন্দপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস ঘোষ বললেন, ‘‘এলাকার শ’খানেক বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো বন্ধ। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার রাত ৯টা থেকে আধ ঘণ্টা প্রতিটি বাড়ির আলো নিভিয়ে রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে।’’

এ দিন বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ হাবড়া থানার পুলিশ দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স সঙ্গে নিয়ে আসে নতুনপল্লিতে। স্কুলের মাঠে বিভাসদের পরিবারের চার জনের দেহ রাখা হয় সেখানে। খানিকক্ষণ পরে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফের আনা হয় মাঠে। শ্রদ্ধা জানাতে আর শেষ দেখা দেখতে তখন উপচে পড়ছে ভিড়। চোখের জল চাপতে পারছেন না অনেকে।

দুপুরের দিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এলাকায় গিয়ে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের স্বান্তনা দিয়ে এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বিভাসদের স্মৃতিতে রাস্তার মোড়ের দু’পাশে কালো কাপড় দিয়ে দু’টি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। বাসিন্দারা অনেকেই জানালেন, এলাকায় শিক্ষার প্রসার ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে পাঠক পরিবারের অবদান ভোলার নয়। আশালতা স্থানীয় ছেলেমেয়েদের বিনা পয়সায় নাটক, নাচ-গান শেখাতেন। নতুনপল্লি বিআর অম্বেডকর শিশুশিক্ষা নিকেতন স্কুলটির জন্য লিলির মা কল্যাণী পাঠক ১০ শতক জমি দান করেছিলেন। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা গণেশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুল তৈরির আগে এলাকার ছোট ছেলেমেয়েদের প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে রেললাইন পেরিয়ে স্কুলে যেতে হত। কল্যাণীকে সমস্যার কথা বলতেই তিনি এক কথায় জমি দান করেছিলেন। ওই জমি না পেলে স্কুল তৈরিই করা যেত না।’’ স্কুলটি সরকারি অনুমোদন পাওয়ার আগে পর্যন্ত আশালতা ওই স্কুলে বিনা পয়সায় পড়িয়েছিলেন বলে জানা গেল।

লিলি ছিলেন অম্বিকা সৌদামিনী বালিকা বিদ্যালয়ের শারীরশিক্ষার শিক্ষিকা। এ সব ছাপিয়ে তাঁর বড় পরিচয় ছিল ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের বারাসত মহকুমা কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। বারাসত স্টেডিয়ামে হ্যান্ডবল প্রশিক্ষণ শিবিরে তালিম দিতেন। সম্প্রতি রাজারহাটে শেষ হওয়া রাজ্য স্কুল সাঁতার প্রতিযোগিতায় সংগঠকের দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষ হাতে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক তপনকুমার রায় বলেন, ‘‘লিলির মৃত্যু এই জেলার ক্রীড়া ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি। এমন দক্ষ সংগঠক বড় একটা দেখা যায় না।’’ আর বিভাসের প্রশংসা তো সকলের মুখে মুখে। কে কে বিপদের দিনে পাশে পেয়েছেন ডাক্তারবাবুকে, সেই গল্প শোনাতে ব্যস্ত।

সন্ধের পরে চার জনের দেহ নিয়ে যখন পাড়া ছাড়ছে শববাহী গাড়ি, শেষ বিদায় জানাচ্ছে কোজাগরীর চাঁদ।

এ দিন বারাসতের নবপল্লির বাড়িতে আনা হয় বিভাসের মামা নীহারেন্দু বিশ্বাসের দেহ। কফিনের উপর কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়রা। ভাইয়ের দেহ জড়িয়ে দাদা নির্মলেন্দু বলেন, ‘‘কী ভাবে ফেরার কথা ছিল, আর কী হল। লক্ষ্মীপুজোর দিন আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’’

Death Acciden Mourn Doctor Laxmi Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy