Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

শেষযাত্রাতেও ভোগান্তি মগরাহাটের শ্মশানে

শববাহী যাত্রীদের সঙ্গে আসা কয়েক জন মহিলা পানীয় জলের জন্য এ দিক ও দিক গিয়ে নলকূপ না খুঁজে পেয়ে সোজা হাজির শ্মশানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উত্তম দাসের কাছে। তিনিও কাছাকাছি কোন নলকূপের সন্ধ্যান দিতে না পারায় তিতিবিরক্ত মহিলারা ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁর উপরেই।

শশ্মানের ভিতরে কলে জল নেই। নিজস্ব চিত্র।

শশ্মানের ভিতরে কলে জল নেই। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৩
Share: Save:

শববাহী যাত্রীদের সঙ্গে আসা কয়েক জন মহিলা পানীয় জলের জন্য এ দিক ও দিক গিয়ে নলকূপ না খুঁজে পেয়ে সোজা হাজির শ্মশানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উত্তম দাসের কাছে। তিনিও কাছাকাছি কোন নলকূপের সন্ধ্যান দিতে না পারায় তিতিবিরক্ত মহিলারা ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁর উপরেই।

শুধু ওই মহিলারা নন, মগরাহাটের মুলটি হংসবেড়িয়া শ্মশানের পানীয় জল ও বেহাল পরিকাঠামোর অভাবে প্রতিনিয়ত ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতি প্রাচীন ওই শ্মশান তৈরি হয়েছিল আদি গঙ্গার পাড়ে। প্রায় ২০ বিঘা এলাকা জুড়ে ওই শ্মশানে সারা মাসে প্রায় ৮০-৯০টি শবদাহ হয়। জেলার দূরদূরান্ত থেকে আসেন অনেকে। কিন্তু পরিকাঠামোর নানা সমস্যা থাকায় হয়রানি হতে হয় শ্মশান যাত্রীদের।

মূল সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ওই শ্মশানের যাতায়াতের ইট পাতা রাস্তাটি দীর্ঘ দিন সংস্কার হয়নি। ফলে খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে শববাহী যাত্রীদের চলাচল করতে হয়। রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যার পরে এলাকা গাঢ় অন্ধকারে ডুবে থাকে। ওই ইট পাতা রাস্তায় বড় গাড়ি না ঢোকায় চাঁদপো‌ল মোড়ের কাছে গাড়ি রেখে দেহ কাঁধে করে শ্মশানে পৌঁছতে হয়।

বহু বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে শবদাহের কাজ চলত। কিন্তু ফি বছর বর্ষায় সমস্যায় পড়তে হতো শবদাহের কাজে। তাই বৃষ্টির হাত থেকে চিতা বাঁচাতে বছর পনেরো আগে একটি আগে একটি প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার টিনের চালের শেড বানানো হয়েছিল। ওই শেডটি তারপর থেকে কোনও সংস্কার না হওয়ায় টিনের ফাঁক দিয়ে অঝোরে জল পড়ে চিতা ভিজে যায়। বৃষ্টির সময়ে এসে পড়লে শবযাত্রীরা চিতার উপরে পলিথিন টাঙিয়ে ধরে থাকেন। বর্ষার সময়ে এক সঙ্গে একাধিক দেহ শেডের নীচে রেখে পোড়ানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকতে হয় অন্য শব যাত্রীদের।

ওই শ্মশানে মগরাহাট এলাকা ছাড়াও উস্তি, জয়নগর, বারুইপুর, বিষ্ণুপুর ও ডায়মন্ড হারবারের একাংশের মানুষ শবদাহ করতে ওই শ্মশানে যান। পূর্ব পুরুষের স্মৃতি বহন করছে, এই আবেগে থেকেই নিজেদের এলাকায় শ্মশান থাকা সত্ত্বেও অনেকে আসেন এখানে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শব যাত্রীদের অভিযোগ, শ্মশানের যাতায়াতের রাস্তা থেকে নানা পরিকাঠামোর সমস্যার জন্য সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া, ধোঁয়ায় এলাকাও দূষিত হচ্ছে। বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরিরও দাবি আছে।

মুলটি হংসবেড়িয়া মহাশ্মশান উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক হারাধন নস্কর পরিকাঠামোর সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘কয়েকশো বছরের পুরনো ওই শ্মশানে গভীর নলকূপের পানীয় জলের ব্যবস্থার জন্য পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে। এমনকী, বৈদ্যুতিক চুল্লির জন্য স্থানীয় বিধায়ককেও জানানো হয়েছে।’’

এ বিষয়ে মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক নমিতা সাহা বলেন, ‘‘ওই প্রাচীন শ্মশানে প্রায় ৫টি ব্লকের মানুষ শবদাহ করতে আসেন। পানীয় জলের নলকূপ বসানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির বিষয়টি মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে জানানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crematorium Water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE